সব্যসাচী ও পৌর ভোট,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
অবশেষে প্রত্যাবর্তন ঘটল সব্যসাচী দত্তের। বিধানসভা ভোটের বেশ কিছুদিন আগে বড় বড় ডায়ালগ দিয়ে তৃণমূল ছেড়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন এবং বিধানসভা ভোটে হেরে যাবার পর সুর বদল করে তৃণমূল নেত্রীর প্রশংসায় মেতে ওঠেন। বোঝাই যাচ্ছিল তৃণমূলে ফেরার জন্য তিনি অস্হির হয়ে উঠেছেন। উত্তরপ্রদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা একটা অজুহাত। তবে ভোটে জিতলে এবং বিজেপি রাজ্যে সরকার গঠন করলে আদৌ কি তিনি পুনরায় তৃণমূলে ফেরার জন্য অস্হির হতেন - উত্তর সহজ। এক কথায় না। আসলে এদের কাছে ক্ষমতাটাই শেষ কথা, নীতি আদর্শ নয়। শুধু সব্যসাচী নয়, দীর্ঘদিন ধরে একটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থেকে সমস্ত রকম রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতা, সুযোগ সুবিধা ভোগ করে ভোটের প্রাক্কালে সংশ্লিষ্ট দলের সামান্য বিপদের আশঙ্কা করে ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলে যারা যোগ দেয় তারা আসলে রাজনীতিবিদ নন, পুরোপুরি ধান্দাবাজ। কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা দলবদল করছেনা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো দলত্যাগ করার সময় তারা সাংবাদিক বৈঠকে পুরনো দল সম্পর্কে যতরকম ভাবে যতটা সম্ভব কটু কথা বলে, কিন্তু পুনরায় দলে ফেরার সময় 'হরেক মাল দশ টাকা'-র মত কেবল একটা স্ক্রিপটেড মন্তব্য থাকে - সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিন্তু কোন কোন বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল সেটা পরিষ্কার করেননা এবং সেইসব ভুল বিষয়গুলো দূর হয়েছে কিনা সেই বিষয়েও মন্তব্য করেননা। ভবিষ্যতে ভুল বোঝাবুঝির বিষয়গুলো আবার সৃষ্টি হলে কি করবেন সেই বিষয়েও
নীরব থাকেন। পুরনো দলে ফিরতে গেলে এইসব বিষয়ে নির্লজ্জ হয়ে নীরব থাকতে হয়।
ভোটের আগে মিডিয়া মেড হেভিওয়েটদের দলত্যাগ সত্ত্বেও তথাকথিত ভোট বিশেষজ্ঞ এবং বিজেপির দাবিকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল দুই শতাধিকের বেশি আসন পেয়ে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতাসীন হয়। মুকুল (এই প্রথমবারের জন্য নির্বাচনে জিতেছেন) ছাড়া একাধিক হেরে যাওয়া দলবদলু পুনরায় তৃণমূলে ফেরার জন্য আকুল হয়ে ওঠে। এদের মধ্যে আপাতত সব্যসাচী ঘরে ফেরার অনুমতি পেল।
সব্যসাচী বা অন্যরা পুনরায় দলে ফেরার সুযোগ পেলে এটুকু নিশ্চিতরূপে বলা যায় মুখে বললেও তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব নীচুতলার কর্মীদের আবেগকে নুন্যতম গুরুত্ব দেয়না। অথচ এরাই দলের স্তম্ভ। সমস্ত হুমকিকে অগ্রাহ্য করে এবং ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এরাই দলকে জিতিয়েছে।
হয়তো দলবদলুদের দলে ফেরানোর ব্যাপারে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অন্য ভাবনাও থাকতে পারে। সামনে পৌর নির্বাচন। বিধানসভা ভোটে তৃণমূল দুই শতাধিক আসন পেলেও অধিকাংশ পৌর এলাকায় তৃণমূলের ফল ভাল হয়নি। কোথাও পেছিয়ে পড়েছে, কোথাও বা বিরোধীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। পঞ্চায়েত বা পৌর নির্বাচন স্হানীয় নির্বাচন। এক্ষেত্রে কখনো কখনো ব্যক্তি বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে এবং দলীয় সত্তার উপর তাদের ভূমিকা বিরাজ করে। খুব মনে পরে তখনো তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে ওঠেনি। কোনো একটা অঞ্চলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের গড় কোনো একটা কেন্দ্রে বামপ্রার্থীর পরাজয় ঘটলেও তাদের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। একেবারে ব্যক্তিগত ক্যারিশম্যা। বিধানসভা ভোটে হেরে গেলেও বিধাননগর পৌর নির্বাচনে সব্যসাচী কিন্তু একটা ফ্যাক্টর। সেখানেও তিনি হারতে পারেন কিন্তু ভোট কেটে তৃণমূলের যাত্রা ভঙ্গ করতে পারেন। যেমন গুসকরায় এখনো চঞ্চল গড়াই বা মল্লিকা চোংদারের (যদিও তিনি তৃণমূলে আছেন এবং দলীয় কর্মসূচিতে সেভাবে দেখা যায়না। কার্যত ব্রাত্য হয়ে আছেন।) মত জনপ্রিয় বিকল্প গড়ে ওঠেনি। আরও অনেক পৌর এলাকায় এধরনের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আছেন। তাই হয়তো রাজীব ফেরার জন্য আকুলিবিকুলি করলেও হয়তো পৌর এলাকা হওয়ায় আপাতত সব্যসাচীর কপালে শিকে ছিড়েছে। নীচু তলার কর্মীদের আবেগকে গুরুত্ব না দিয়ে হয়তো পরে অন্য পৌর এলাকার আরও কোনো দলত্যাগী সুযোগ পেতে পারে। সার্কাসের ট্রাপিজের খেলার মত এক শ্রেণির রাজনীতির কুশীলবদের ট্রাপিজের খেলা চলতেই থাকবে। দেখার জন্য জনগণতো আছেই।