স্বেচ্ছাসেবী সংস্হার পক্ষ থেকে দুস্থদের হাতে তুলে দেওয়া হলো শীতবস্ত্র,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,
কারও কাছে ব্যবসা মানে কেবল প্রফিট এণ্ড লস। আবার কারও কাছে লাভ লোকসানের সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্ব পায় সমাজসেবা। বিগত কয়েক বছর ধরেই সুভদ্র আচরণ ও সমাজসেবার গুণে গুসকরা ও তার আশেপাশের এলাকার মানুষের কাছে বিশেষ পরিচিতি লাভ করে চলেছেন পশ্চিম মঙ্গলকোটের সরুলিয়ায় অবস্হিত একটি হিমঘরের কর্ণধার সুব্রত কোনার ও সঞ্জীব কোনার। সমাজসেবাকে অর্থবহ করে তোলার জন্য বাবা-মার নামে গড়ে তুললেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্হা 'সত্য সুষমা ফাউন্ডেশন'।
সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্হার উদ্যোগে এবং 'ফ্রেণ্ড ইন নীড এণ্ড ডীড' সংস্হার সহযোগিতায় ২৩ শে জানুয়ারির মত ঐতিহাসিক দিনে সরুলিয়ার হিমঘরের চাতালে আশেপাশের চকপরাগ, জালপাড়া, গণপুর, জয়পুর, নারায়নপুর প্রভৃতি ৮-১০ টি গ্রামের দেড় শতাধিক মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় কম্বল ও চাদরের মত শীতবস্ত্র, টিফিন এবং মাস্ক। এমনকি অভিভাবকদের সঙ্গে আসা কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় খাতা, কলম সহ পড়াশোনার সামগ্রী। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে অনেক মানুষ শীতবস্ত্র নেওয়ার জন্য উপস্থিত হলেও অনেকেই আসতে পারেনি। জানা যাচ্ছে সংস্হার পক্ষ থেকে তাদের হাতে শীতবস্ত্রগুলি পৌঁছে দেওয়া হবে। উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তি ও হিমঘরের কর্মীরা শীতবস্ত্রগুলি প্রাপকদের হাতে তুলে দেন। প্রবল ঠান্ডার সময় শীতবস্ত্রগুলি পেয়ে মানুষগুলি খুব খুশি।
এর আগে নেতাজীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে তাকে শ্রদ্ধা জানান উপস্থিত ব্যক্তিরা। এমনকি কয়েকজন দুস্থ মানুষও নেতাজীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মঙ্গলকোট থানার আই.সি তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী পিণ্টু মুখোপাধ্যায় ও আধিকারিক সঞ্জয় ওরাং, কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের অধ্যক্ষ ফাদার থামসিন সহ দুই শিক্ষক মি. পিটার হেলা ও মি. পার্সি, বিশিষ্ট সমাজসেবী মি. মুখার্জ্জী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্হার দুই কর্ণধার সুব্রত কোনার ও সঞ্জীব কোনার সহ তাদের পরিবারের দুই সদস্য এবং হিমঘরের সমস্ত কর্মী সহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। করোনা আবহে প্রত্যেকের মুখে ছিল মাস্ক এবং বজায় ছিল সামাজিক দূরত্ব।
আপদে-বিপদে মানুষের পাশে থাকার জন্য হিমঘর কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করে আই.সি বললেন - এদের কাছে ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে সমাজসেবাটাও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ সেটা এনারা বারবার প্রমাণ করে চলেছেন। তার মতে ব্যবসার জগতে এটা একটা বিরল ঘটনা। নিজের পঁচিশ বছরের চাকরি জীবনে একমাত্র তিনি এখানেই এই দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছেন। অন্যান্য বক্তারাও সমাজসেবার জন্য সুব্রত বাবুর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুব্রত বাবুর কন্যা সায়ন্তী কোনার। ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতকোত্তরের মেধাবী ছাত্রী সায়ন্তীর ইচ্ছে ভবিষ্যতে শিক্ষার জগতের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। অর্থাৎ শিক্ষিকা হওয়া। একইসঙ্গে তার বড় ইচ্ছে বাবা-কাকার দেখানো পথ অনুসরণ করে অসহায় দুস্থদের পাশে দাঁড়ানো। সায়ন্তীর বক্তব্য - মায়ের সঙ্গে আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে। পড়াশোনার জন্য আমাকে কলকাতায় থাকতে হয়। বাবা-কাকার সমাজসেবার কথা শুনতাম। আজ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হলো। দু'জনের জন্যেই আমি খুব গর্বিত। আগামী দিনে আমি ওদের মত হতে চাই। এরজন্য দরকার সবার আশীর্বাদ। কথা বলার সময় সায়ন্তীর মধ্যে ছিলনা কোনো কৃত্রিমতা, বরং ছিল কিশোরী সুলভ লাজুকতা। মেয়ের কথা শুনে পাশে দাঁড়ানো সুব্রত বাবু ও তার স্ত্রী এবং সঞ্জীব বাবুর চোখেমুখে দেখা যায় খুশির ঝলক। অনেককেই বলতে শোনা যায় - সমাজসেবার কাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনার পরিবারের আগামী প্রজন্ম এসে গেছে।