গোপাল দেবনাথ,
দক্ষিন কলকাতার মল্লিক গেস্ট হাউজে ‘মুস্কিল আসান ফাউন্ডেশন’ ও ‘ইউ কালেকশন’ যৌথভাবে আয়োজন করেছিল “যৌন কর্মীদের হাতে ভাইফোঁটা”র অনুষ্ঠান। দূর্বারের বর্তমান সভাপতি শ্রীমতি বিশাখা লস্কর সাংবাদিকদের জানান, -“তাঁদের সংগঠন ভারতবর্ষের অন্যান্য যৌনকর্মী সংগঠন গুলির সাথে সমন্বয় রেখে বহুদিন ধরে কাজ করে চলেছেন। বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই যৌনকর্মীদের নিয়ে রিসার্চ এর জন্য আসেন বিভিন্ন ছাত্রছাত্রীরা”। বিশাখা দেবী ধন্যবাদ জানিয়েছেন ‘মুস্কিল আসান ফাউন্ডেশন’ কে তাঁদের এই সাধু উদ্যোগের জন্য। তিনি আরও বলেন -“যৌন কর্মীরা যেখানে সমাজের চোখে অচ্ছ্যুত, সেখানে এই সংস্থা এগিয়ে এসেছেন এবং ভাইফোঁটার মতো একটি পবিত্র উদ্যোগের মাধ্যমে। এই শুভ উদ্যোগের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের সমাজের চোখে সমান আসন দেবার জন্যই এত আয়োজন”।সারা বাংলার প্রায় ৬০,০০০ যৌন কর্মীদের নিয়ে গঠিত ‘দূর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’র সূচনা হয় ১৯৯৫ সালে। এঁদের স্বার্থেই গঠিত হয় ‘ঊষা কো-অপারেটিভ’ এবং যৌন কর্মীদের সন্তানদের জন্য ‘কোমল গান্ধার’ নামক সঙ্গীত বিভাগ, ফুটবল টিম, হোস্টেল সহ পশ্চিমবঙ্গের ৬০ টি স্থানে যৌন পল্লীর যৌনকর্মীদের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে ‘দূর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য অতিথি ও বিধায়ক শ্রী দেবাশিষ কুমার। তিনি জানান -” এঁদের সমাজের মুল স্রোতে যুক্ত করার এই প্রচেষ্টায় সকলেরই এগিয়ে আসা উচিৎ”। তিনি আরও বলেন -“সবসময় এই ধরণের কাজে সংস্থার পাশে থাকবেন এবং সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় সাহায্যের ব্যবস্থা করবেন”। কলকাতা পুলিশের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার শ্রী সুজয় চন্দ (আইপিএস), অভিনেত্রী তথা পরিচালিকা শ্রীমতি সুদেষ্ণা রায়, পণ্ডিত মল্লার ঘোষ, কলকাতা হাইকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী শ্রী জয়ন্তনারায়ণ চ্যাটার্জী, লেখক শ্রী হিমাদ্রী কিশোর দাশগুপ্ত, ‘সৃষ্টি ডান্স একাডেমী’র কর্ণধার শ্রীমতি ইন্দ্রাণী গাঙ্গুলী এই উদ্যোগের জন্য ভূয়সী প্রশংশা করেন। উপস্থিত অতিথিগণ ভবিষ্যতে সমস্ত কর্মকান্ডে আয়োজক সংস্থার পাশে সাধ্যমতো থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। অনান্য বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা রাজদীপ সরকার, বাচিক শিল্পী আবীর সেনগুপ্ত, শ্রীমতি মল্লিকা ঘোষ, শ্রী রণবীর দাস সহ বিশিষ্টজন। ওইদিন ভাইফোঁটা উপলক্ষে যৌনকর্মীদের হাতে উপহার তুলে দেওয়া হয় ‘ইউ কালেকশন’ এর পক্ষ থেকে। সংস্থার কর্ণধার এবং ‘মুস্কিল আসান ফাউন্ডেশনে’র মুখ্য পৃষ্ঠপোষক শ্রীমতি সুমিতা ভট্টাচার্য্য জানান “মুস্কিল আসান ফাউন্ডেশন”র এই মহতী উদ্যোগে সরাসরিভাবে যোগ দিতে পেরে এবং যৌনকর্মীদের জন্য সামান্য কিছু করতে পেরে তিনি খুবই খুশি। আগামীদিনে দুঃস্থ মানুষের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে মুস্কিল আসান ফাউন্ডেশন।বাঙ্গালি বৈদ্য সমাজের সম্পাদক তথা ‘মুস্কিল আসান ফাউন্ডেশন’র অন্যতম উদ্যোক্তা শ্রী বিরেশ্বর দাশগুপ্ত জানান -” বাঙালি বৈদ্য সমাজের বিগত ৫-৬ বছরের সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যুক্ত হতে চান। অথচ জন্ম অথবা বিবাহ সূত্রে বৈদ্য না হলে অবৈদ্য সদস্যদের কর্মসমিতেতে নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছিল না এতদিন। তাই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দুঃস্থ মানুষের জন্য কাজ করতে ‘মুস্কিল আসান ফাউন্ডেশন’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো গত ৭ নভেম্বর এর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সমাজসেবায় আগ্রহী যে কোনো জাতি ধর্মের মানুষই এবার আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারবেন দুঃস্থ মানুষের প্রয়োজনে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে এবং দূর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সাথে যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গের ৬০ টি যৌনপল্লীর যৌনকর্মী এবং তাঁদের পরিবারের প্রয়োজনে নিঃশুল্ক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, ঔষধ, জামাকাপড়, বাচ্চাদের পড়াশোনার সামগ্রী অথবা অন্যান্য যে কোনো সামাজিক চাহিদা পূরণের যথাসাধ্য প্রচেষ্টার সূচনালগ্নে উপস্থিত সকল অতিথিবৃন্দ এবং সহযোগী সংস্থাগুলির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে শ্রী বিরেশ্বর দাশগুপ্ত অনান্য সকল সমাজসেবী সংগঠনগুলিকে মুস্কিল আসান ফাউন্ডেশনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কাজে এগিয়ে আসার আবেদন জানান।