পূজা শেষ হলো বুঝি,
প্রণব মাহাত
পাড়ায় প্রতিটি বাড়িতে শঙ্খ বাজছে, আজ লক্ষ্মীপূজা
মামাবাড়িতে পূজা হয় ঘটা করে, ওপাড়াতে।
ভাঁজ করা শখের লাল শাড়িটা বের করলাম ভাঙা টিনের বাক্স থেকে,
মুখে প্রসাধনী দিলাম, চোখে শখের কাজল লাগালাম, আলতাও পরলাম।
মা, ওমা,আসছি গো, তুমি খেয়ে নিও সময় মতো…
আমি প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছি, ঠাকুর ঘরে।
আমার অর্ধনগ্ন,ক্ষতবিক্ষত, শরীরটা এখন পড়ে আছে নদীর চরে,
চোখের কাজল ধুয়ে গেছে নয়নের বাঁধভাঙা জলে…
জীবনের রঙিন স্বপ্নগুলো ভেসে গেছে লাল শাড়ির সাথে নদীর স্রোতে…
পায়ের আলতা, শরীরের রক্ত, মিশছে নদীর নির্মল জলে…
আমি অসহায়, শুয়ে আছি নদী মাতৃকার কোলে…
কানে ভাসছে পুজোর কাঁসর, ঘন্টা, শঙ্খধ্বনি…
আজ নরখাদকদের নগ্ন লোলুপতার শিকার আমি,
তীক্ষ্ণ ছোবলের দাগ বুকে, মুখে….
দোষ করেছে ওরা, তবুও আমাকে মুখ লুকোতে হবে সমাজের বুকে…
অধিকার লুন্ঠিত হয়েছে আমার, বাঁচতে হবে আমাকেই কলঙ্ক মেখে,
ধন্য সমাজ,ধন্য মানব, ধন্য তোমার বিচার।
উলুধ্বনি থেমে গেছে, এরপর প্রদীপও নিভে যাবে….
পূজা শেষ হলো বুঝি….
অসুস্থ মা আছে একমাত্র মেয়ের অপেক্ষায় বসে….
আমার নীরব চোখের তারা উৎসুক আকাশের পানে চেয়ে,
একটা নতুন সকাল দেখব বলে।