Spread the love

নিরুত্তর,

কিরীটী ভট্টাচার্য্য
(জামশেদপুর)

যুদ্ধ শেষ – গঙ্গার তীরে
মধ্যাহ্নের তেজস্বী তপন স্তিমিত হয় ধীরে,
মিলি যায় নীলিমার ওই দূর পাড়ে
চক্ষু মুদি দ্রৌপদী প্রার্থনা রতা
পিতা মাতা সন্তান নাহি কেহই জীবিত;
বৈভব দাস-দাসী রাজসিংহাসন,
পড়ে আছে হেথা সব –
শুধু নাহি দেখিবার কোন আপনজন!

পান্ডবের অন্তঃপুরে – গোধূলীলগনে
করজোড়ে করি আহবান
কাতর মিনতি করি কুলবধূ পান্ডবের –
ডাকিতেছে স্রষ্টারে আজি একটিবার
দেখা দাও ঋষি শ্রেষ্ঠ “মহাভারতকার”
কৃষ্ণদৈপায়নব্যাস ।

বিচলিত স্রষ্টা আজি যাজ্ঞসেনী দ্বারে
কি দিবে উত্তর!
যুদ্ধের অবসানে সমাধান হইয়াছে মহাভারতের
বিদায়ের ক্ষণ – গাঁথা হইয়াছে সারা
বাকি শুধু আছে অভিনয়;
এখন উত্তর দেওয়া তাঁর কর্ম নয়!
ঋষি শ্রেষ্ঠ আজি নিরুপায়
ভক্তের মনবাঞ্ছা না করি উপায়
ধর্মচ্যূত হওয়া অপরাধ;
শেষ পর্বে এসে এযে পরমাদ!
কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসিবে প্রপৌত্রবধূ
যাগযজ্ঞ্জাত কন্যা যাজ্ঞসেনী আজি
ঋষি শ্রেষ্ঠ কাছে তাহা নহে অজ্ঞাত
শুধু নাহি উত্তর মহর্ষির কাছে!

দ্বার খুলে আসি
সম্মুখে দন্ডবত হয়ে নতজানু –
দাঁড়ায়ে ক্ষণকাল পান্ডব রাজকুলবধূ;
হেথা মোর পাদ্য-অর্ঘ্য করহ গ্রহণ মুনিবর
ঋষি মধ্যে তুমি শ্রেষ্ঠ “মহাভারতকার”
কৃষ্ণদৈপায়নব্যাস ।

দক্ষিণ হস্ত তুলি করি আশীর্বাদ দিয়া বরাভয়
ঋষি কহে;
কহো পুত্রী মোর, আজি কেনো ডাকিলে আমায়?

আর নাহি চাহি আমি তব বরাভয়
বৈভব রাজসুখ রক্তক্ষয়ী জয়
আত্মীয় পরিজন সন্তান হীনা
চিত্ত মোর ঋষিবর না মাগে করুণা
পাতা জুড়ে থাক তব মহাভারতের
ছত্রে ছত্রে আছে লেখা জয় পৌরুষের
মূঢ় নারী রুঢ় নারী নারী বিদ্বেষ
কামের অমৃত পাত্র
হেথা হোথা যত্র-তত্ৰ
উলঙ্গ করিয়া তুমি কি আনন্দ পেলে?
কি হইলো মোক্ষলাভ নারী অবহেলে?
রোজ করি পাঠ তবু পারিনি বুঝিতে
তব লেখা পাশা খেলা অঙ্ক –
কাপুরুষ পুরুষেরে দিয়া তুমি
বাজাইলে অহমিকা শঙ্খ !
সত্য কি হয়েছিলো তাহা শুধু জানে একজনা
ত্রিকালদর্শী তুমি,,,,
তুমি শুধু জানো এই নারীর বিড়ম্বনা!

উলঙ্গ করিলে তুমি প্রপৌত্র বধুরে
নাকি ! পুরুষের অহংকারে আদি সৃষ্টিরে?
শুধু তুমি জানো ঋষিবর
আসলে কি ঘটেছিলো বস্ত্রহরণে !
কোথা হইতে আসিলেন দ্বারকাধিপতি?
বহুদূরে পাশা ক্রীড়া থেকে
সহস্র হস্ত শাড়ী আসিলো কেমনে !
সে দিনের বস্ত্রহরণে?

ব্যাস নিরুত্তর !

নাহি থামে দ্রৌপদী চোখে রেখে চোখ
অনর্গল কহি চলে,,,,,,,
নাহি লেখা ক্রীড়া পর্বে ব্যাসদেব শ্লোক
দিয়ে যায় ঘটনার দৃশ্য বিবরণ
মিথ্যা কেশব লীলা বস্ত্রহরণ !

অজ্ঞাত আশংকাতে আজি দগ্ধ মুনিবর
সত্য লুকাইয়াছিলো তাই নিরুত্তর
পুত্রী কাছে কেমনে মাগিবে ক্ষমা
সজ্ঞানে মিথ্যা বর্নণা,,,,,,,
আজন্ম পাপ তাই রহিলো যে জমা!

পুত্রী কহে – শুন ঋষিবর
সেদিনের সভাস্থলে একবস্ত্রা আমি
সভাভর্তি কাপুরুষ মাঝে
জরবত রয়েছে বসিয়া মোর পঞ্চ স্বামী
ভীষ্ম দ্রোণ কৃপাচার্য্য বিদুর শকুনী
লালায়িত দুটি চক্ষু কর্ণ উচ্ছসিত
প্রতিহিংসা মিটাইতেছে বসি দুর্যোধন
হাত তুলি অগ্রসর হয় দুঃশাসন
এহেন সময় ওঠে হটাৎ হুংকার
অন্তঃপুর ‘হতে পশি বামা চিৎকার
বিদীর্ণ করিছে কর্ন উপস্থিত যতেক নৃপতি
দুঃশলারে সঙ্গে করি কৌরব রাজবধূ ভানুমতী
করিলা প্রবেশ,,,,,,,,,,,
দেখি আজ স্পর্ধা আছে কার ?
কৃষ্ণারে করিবে স্পর্শ এমন পুরুষ
এই সভা মধ্যে তারে করিব দুরমুশ
একে একে বস্ত্র দিব খুলি
আজি আছি যত, সহস্র রমণী!

পলকে গুটায় হাত পাপী দুঃশাসন
দু-আঁখি করিলো বন্ধ কর্ণ দুর্যোধন
অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রের সম্বিত ফিরি
রক্ষিলো কৃষ্ণারে সেদিন সহস্র রমণীর শাড়ী
আসলে নারীই করিলো রক্ষা সম্ভ্রম নারীর

কহো ঋষি আজ -কেন দিলে বাদ
তোমার রচনা মাঝে এহেন নারী প্রতিবাদ
কেমনে আসিলো কেশব অদৃশ্য বস্ত্র লয়ে
সভাস্থল ‘পরে
বাস্তব কাহিনী ছেড়ে কেন তুমি রচি দিলে
অলৌকিকে ‘ভরে
বানালে দেবতা তাঁরে,,,,,,,,,,,
মর্য্যাদা করিলে ক্ষুন্ন নারী অধিকারে
কাপুরুষ পৌরুষে গাহি জয়জয়কার
আজ নাহি থেকো চুপ ঋষি
এই সন্ধ্যা সাক্ষ্মী রাখি
দাও আজি উত্তর আমার !!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *