Spread the love

রবীন্দ্রনাথের  লেখনীতে উঠে এসেছে কোপাই 

নদীর গতিপথে  কংক্রিটের  নির্মাণ বন্ধ করে দিলেন জেলাশাসক

         খায়রুল  আনাম

সামনে সবুজের মোড়ক দিয়ে ভিতরে সবুজকে ধ্বংস করে আর নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করে চলছিলো কংক্রিটের  নির্মাণ।  যা প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন নদী ও প্রকৃতিপ্রেমী  মানুষজন। শান্তিনিকেতন–গোয়ালপাড়ার কোল ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে কোপাই নদী।  যে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ ছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ  কোপাই সম্পর্কে  লিখেছেন–কোপাই আজ কবির আপন সাথী করে নিলে,  সেই ছন্দের আগল হয়ে গেল ভাষার স্থলে জলে, সেখানে ভাষার গান আর  যেখানে ভাষার গেরস্থালি। কবি মোহনপুর মৌজার কোপাইয়ের এই অংশটি ছিলো বোলপুর-শ্রীনিকেতন  ব্লকের রূপপুর  গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। কিন্তু সীমানা পুর্নবিন্যাসের ফলে এই অংশটি চলে এসেছে বোলপুর পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। বোলপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে সেখানে সীমানা পিলারও দেওয়া হয়েছে।  কিন্তু  এখন যখন সেই কোপাই নদীবক্ষ বুজিয়ে বেআইনী কংক্রিটের  নির্মাণ হচ্ছে  তখন  রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ও বোলপুর পৌরসভা কেউ এই নির্মাণের  দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। আর সেই সুযোগে বা  গোপন কোনও বোঝাপড়ায় অসাধু একটি চক্র  সামনে সবুজ আচ্ছাদন টাঙিয়ে কোপাই নদীর গতিপথের অনেকটাই  রুদ্ধ করে বেআইনী কংক্রিটের  নির্মাণ শুরু করে দিয়েছিলেন এবং ইতিমধ্যেই  ৩৩ টি কংক্রিটের কয়েক ফুট উচ্চতার পিলারও নির্মাণ করে নিয়েছেন। বিষয়টি সামনে আসতেই এভাবে নদীর গতিপথ রুদ্ধ করে কংক্রিটের  নির্মাণের প্রতিবাদে সরব হন বিভিন্ন শ্রেণির  মানুষজন।  কোপাই নদীর পাড়েই অবস্থান-আন্দোলনে বসেন  শান্তিনিকেতনের ও বিশ্বভারতীর  পড়ুয়া, কর্মী ও  প্রাক্তনীদের একাংশ। নদীবক্ষ  দখল করে যে ভাবে কংক্রিটের  নির্মাণ হচ্ছে  তাতে ঐতিহ্যবাহী কোপাইকে বাঁচাতে  জেলাশাসক, বোলপুরের মহকুমা শাসক,  বোলপুর পৌরসভার কাছে আবেদনও জানানো হয়। বিষয়টির  গুরুত্ব উপলব্ধি করে  জেলাশাসক বিধান রায়, বোলপুরের  মহকুমাশাসক অয়ন নাথ জেলা ভূমি দফতরের বিভিন্ন আধিকারিকদের নিয়ে মঙ্গলবার  ১৬ জানুয়ারি কোপাই নদীবক্ষেে যেখানে বেআইনী নির্মাণ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে,  সেই জায়গায় পৌঁছে  যান এবং মাপজোকও করেন। তারপরই জেলাশাসক  নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেন। জেলাশাসক জানান, প্রাকৃতিক নিয়মে এবং নদীর  গতিধারায় নদীর গতিপথের পরিবর্তন  ঘটে থাকে।  নদীর এক পাড়ের সঙ্গে অন্যপাড়ের তারতম্য ঘটে যায়। এক্ষেত্রে যারা নির্মাণ কাজে হাত দিয়েছেন তারা রিসোর্ট  তৈরী করতে চাইছেন।  অথচ তার সপক্ষে কোনও নথি দেখাতে পারছেন না।  তাই এই নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ  দেওয়া হলো। সমস্ত নথিপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখে পরবর্তী  পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার আগে কোনওভাবেই এখানে নির্মাণ কাজ করা  যাবে না বলে জেলাশাসক জানিয়ে দেন।

ছবি : পরিদর্শনে  জেলাশাসক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *