ঝড়,
চিত্রা কুণ্ডুবারিক,
ওই দূরে দেখা যায় মাঝি
নাও নিয়ে বেয়ে যায় আপন মনে।
অনেক মানুষ চলছে তার নাও খানিতে।
মাঝি নিজের মনে গান গেয়ে সকল যাত্রীকে আনন্দ দিচ্ছে।
বেশ ভালো লাগছে ভাটিয়ালি গান ভেসে চলেছে অনেক দূর পর্যন্ত।
যাত্রীরা গানের মাঝে মাঝে বাহবা দিতে থাকে।
এক মনোরম পরিবেশে মেতে উঠেছে।
হঠাৎ করে দেখা যায় ঈশান কোণে কালো মেঘ জমেছে।
চারিদিক অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
মাঝি গান থামিয়ে চারিদিক নজর করছে।
বলে ওঠে এ মেঘ ভালো ঠেকছে না।
যাত্রীরা হুশিয়ার শান্ত হয়ে বসো।
ও মাঝি নাও চালাও দ্রুত যাত্রীদের আওয়াজ উঠেছে। কোনো যাত্রী ভয়ে লাফালাফি শুরু করেছে।
নৌকা দুলে উঠছে বারেবার।
মাঝি তাদের শান্ত হতে বলছে।
নৌকা ডুবে গেলে দোষ মাঝির হবে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা।
ওদিকে হালকা ঝড়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
যাত্রীদের অনেকের কাছে তাদের বস্তা বোঝাই ব্যাবসায়িক জিনিসপত্র।
একেই নৌকা ভারী।
যাত্রীদের চিৎকার ও মাঝি ঠিকঠাক করে নিয়ে চলো ,
না হলে মরতে হবে।
ধীরে ধীরে ঝড়ের গতি বাড়াতে থাকে।
নৌকা দুলে দুলে উঠছে।
এক একসময় মাঝির আয়ত্তের বাইরে যেন চলে যাচ্ছে সবকিছু।
তার একটাই চিন্তা কোনো যাত্রীর যেন কোনোভাবেই অসুবিধা না হয়।
না ঝড় ছুটে আসছে,
বাড়তে থাকছে তার গতি।
নদীর জল উথাল পাথাল করছে।
নৌকা বেগতিক হচ্ছে।
এবার মাঝি সকলের কাছে অনুরোধ করেছে,
” ওগো নাও হালকা করো।”
যার যা আছে জলে ভাসাও।
নাও সামলানো বড় মুশকিল হচ্ছে।
যাত্রীবাহী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
কি বলো গো মাঝিভাই “এ কি করে সম্ভব”।
প্রাণ চলে যায় যাক তবু এই ধন ফেলবো না।
মাঝি কিছুতেই রাজি না।
এই সামান গেলে সবার প্রাণ বাঁচানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
নৌকা ডুবে যাবে।
দেখছো না ঝড়ের গতি কেমন এলোপাথাড়ি বয়ে চলেছে।
কিন্তু কেউ মাঝির কথা সেদিন পাত্তা দেয় নি।
বুক আগলে বসে থাকে।
বিপদ বাড়তে থাকে।
নৌকোয় জল ঢুকতে থাকে।
এবার শঙ্কা সকলের।
নৌকো এগোতে পাচ্ছে না।
মাঝ নদীতে ঘুরপাক খাচ্ছে।
এবার টনক নড়েছে,
মাল বোঝাই ব্যাবসায়িক তাদের জিনিস ফেলতে থাকে একে একে।
কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই,
কারণ নৌকো ডুবতে শুরু করে।
মাঝি হাল ছেড়ে চুপ করে বসে থাকে।
তার দুচোখ জলে ভিজে।
চোখের সামনে দেখবে সকলের মৃত্যু।
কিছু মানুষ ঝাঁপ দেয়।
হয়তো বাঁচলেও বাঁচতে পারে এই আশায়।
এক সময় নৌকো ডুবে যায়।
মাঝি আপ্রাণ চেষ্টা করে বাঁচাতে।
শেষে যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
যদি সাঁতরে চলে যায়।
কিন্তু মাঝি সবাইকে ফেলে দিলেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি।
কারণ ঝাঁপ দিতে গিয়ে নৌকোর এক কোণে তার পা আটকে যায়।
হাত বাড়িয়ে চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কারো সাড়া মেলেনি।
তুমুল ঝড়ে মাঝিভাই আটকে রইল মাঝ দরিয়ায় শান্ত হয়ে। একসময় ঝড় থেমে যায় কিন্তু চারিদিক শান্ত।