জুলাই -সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে এলআইসি-র রেকর্ড মুনাফা:
পার্থ প্রতিম সেন (প্রাক্তন চেয়ারম্যান পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাংক)
১৯৫৬ সালে ২৪৫ টি ছোট ছোট দেশী বিদেশী বিমা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ড কোম্পানি জাতীয়করণের মাধ্যমে ভারতীয় জীবন বিমা নিগম বা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এলআইসি)-র যাত্রা শুরু হয়েছিল আমাদের দেশে।
গত শতাব্দীর নব্বই দশকের পর থেকে ভারতের মাটিতে বেসরকারি বীমা কোম্পানি না আসা পর্যন্ত ভারতে জীবন বিমা ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের।
প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের মালিকানা ছিল ১০০ শতাংশ।
তবে অতি সম্প্রতি অর্থাৎ এই বছরের (২০২২) মে মাসে এলআইসি প্রথম শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করে। অর্থাৎ ৬৬ বছর পর বেসরকারিকরণের দিকে
এলআইসি-র যাত্রা শুরু।
আর বেসরকারিকরণের দিকে পা বাড়ানোর সাথে সাথেই এলআইসির রেকর্ড মুনাফা। এই আর্থিক বছরের (২০২২-২৩) দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে এলআইসি-র ট্যাক্স পরবর্তী মুনাফা (পিএটি) দাঁড়িয়েছে ১৫,৯৫০ কোটি টাকা যা কিনা এক বছর আগের ত্রৈমাসিকের মুনাফা থেকে প্রায় দশগুণ বেশি। এক বছর আগের ত্রৈমাসিকের মুনাফা ছিল ১,৪৩৩.৭১ কোটি টাকা।
তবে এলআইসিআই সূত্র থেকে জানা যায়, এক ত্রৈমাসিকে এত বেশি মুনাফা বৃদ্ধির কারণ হল একটি একাউন্টিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন যার ফলে ১৪,৩০০ কোটি টাকা নন-পার্টিসিপেটিং পলিসি খাত থেকে শেয়ার হোল্ডার ফান্ড খাতে ট্রান্সফার করা হয়েছে এবং তার কারণে এই মুনাফা বৃদ্ধি।
সাথে সাথে এলআইসি-র শেয়ারের দামেও বেশ তেজি ভাব আসে। ১৪ নভেম্বর সোমবার এলআইসি-র শেয়ারের দাম ৩৬.৯৫ টাকা বেড়ে ৬৬৪.৬৫ টাকায় দাঁড়ায়।
তবে এলআইসি-র আইপিও-র দাম ৯৪৯ টাকা থেকে বর্তমানে শেয়ারের দাম অনেক পিছনে আছে।
আইপিও হল ইনিশিয়েল পাব্লিক অফার অর্থাৎ যখন এলআইসি-র শেয়ার প্রথম শেয়ারবাজারে এসেছিল।
অনেক আশা নিয়ে রিটেল বিভাগে অনেক ব্যক্তি
এলআইসি-র আইপিও-তে লগ্নি করেছিলেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁদের লাভের আশা পূরণ হয়নি।
প্রসঙ্গতঃ শেয়ার মার্কেট এমন একটি জায়গা যেখানে কোম্পানির পারফর্ম্যান্স, প্রোডাক্ট ইনোভেশন, সার্ভিস কোয়ালিটি, দক্ষ ও কুশলী মানব সম্পদ ইত্যাদি এবং ব্যবসা ও মুনাফা বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন পদক্ষেপ নিতে পারলে লগ্নিকারীদের মন জয় করা যায়, আর তখনই লগ্নিকারীরা বেশি বেশি করে এলআইসি-র শেয়ার কিনতে চাইবে এবং যখনই সাপ্লাই থেকে ডিমান্ড বেশি হবে বা বিক্রেতা থেকে ক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যাবে, তখনই এলআইসি-র শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়বে আর এলআইসি-র শেয়ার হোল্ডারদের মনোবাসনা পূর্ণ হবে।
এই সত্যটুকু ম্যানেজম্যান্ট, এমপ্লয়িজ সবাইকে বুঝতে হবে।