চিটফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরামের সাংবাদিক সম্মেলন,

রাজকুমার দাস,

সারা ভারতের কোটি কোটি প্রতারিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত, অবহেলিত ও আর্থিক-মানসিক ভাবে সর্বস্ব নিঃশেষিত চিটফান্ডের আমানতকারিদের পক্ষ থেকে
চিটফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরামের তরফে এক সাংবাদিক সম্মেলন কলকাতা প্রেস ক্লাবে করা হয় বৃহস্পতিবার।উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, অশোক গাঙ্গুলী সহ অনেকেই।

একথা অনস্বীকার্য, সরকারি সংবিধিবদ্ধ সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রণের ফাঁস গলে এইসব অবৈধ অর্থ লগ্নি কোম্পানিগুলি সারা ভারতবর্ষ জুড়ে দিনের পর দিন ১০ কোটিরও বেশি অসহায় আমানতকারিদের কষ্টার্জিত প্রাপ্য অর্থ ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে। ফলতঃ এই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে বহু মানুষকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে। যার জন্য মূলত দায়বদ্ধ এই সমস্ত সংবিধিবদ্ধ সংস্থাগুলি। যাদের চরম উদাসীনতা, নিষ্ক্রিয়তা ও প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে এইসব বেআইনি অর্থ লগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দ্বিধায় মানুষের অর্থ ফেরত না দিয়ে তাদের অবৈধ অর্থ সংগ্রহ চালিয়ে গেছে।

উপরোক্ত বিষয়ে আমরা সবিশেষ আলোকপাত করতে চাই আপনারা অর্থাৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের কাছে। কারণ যখন বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে, তখন একমাত্র আপনারা এই বৈদ্যুতিন ও মুদ্রণ মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে অসহায় মৃত্যুপথ যাত্রী এই সমস্ত প্রতারিত আমানতকারিদের পরিস্থিতি তুলে ধরে ন্যায় বিচারের যথাযথ প্রয়োগে বাধ্য করতে পারেন। দাবিসনদঃ

১) বিগত সাত বছর ধরে ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় (সুপ্রিম কোর্ট) ও বিভিন্ন উচ্চ ন্যায়ালয় থেকে এই অবৈধ অর্থ সংগ্রহের তদন্ত ও আমানতকারিদের অর্থ ফেরতের নির্দিষ্ট নির্দেশ অনুযায়ী অবিলম্বে সংবিধিবদ্ধ সংস্থাগুলিকে তাদের আদালতের নির্দেশ মেনে নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।

২) আমানতকারিদের অর্থ ফেরত প্রক্রিয়াকে মসৃণ এবং অব্যাহত রাখতে অবিলম্বে উচ্চ আদালত দ্বারা গঠিত মাননীয় প্রাক্তন বিচারপতি শ্রী শৈলেন্দ্র প্রসাদ তালুকদারের নেতৃত্বাধীন ওয়ান ম্যান কমিটি (এ পর্যন্ত ৫৪টি কোম্পানি বিষয়ক) ও মাননীয় প্রাক্তন বিচারপতি শ্রী দিলীপ শেঠের নেতৃত্বাধীন অ্যাসেট ডিসপোসাল কমিটিকে (রোজভ্যালি বিষয়ক) আরও বেশি ক্ষমতা প্রদান ও সিভিল কোর্টের মর্যাদা দেওয়া, অবৈধ অর্থ লগ্নি কোম্পানিগুলির সম্পত্তির মূল্যায়ণ ও বিক্রয় করে আমানতকারিদের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়াসহ প্রতিটি বিষয়ের জন্য আদালতের নির্দেশের প্রতিক্ষায় যাতে বিলম্বিত না হয়।

৩) আদালতের নির্দেশে অবৈধ কোম্পানির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সংবিধিবদ্ধ সংস্থাগুলিকে ওয়ান ম্যান কমিটি ও অ্যাসেট ডিসপোসাল কমিটিতে দ্রুত হস্তান্তরের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪) রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে ওয়ান ম্যান কমিটি ও অ্যাসেট ডিসপোসাল কমিটিকে যথাযথ আর্থিক ও উন্নত পরিকাঠামো প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫) রাজ্য সরকার ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থাকে অবৈধ অর্থ লগ্নি সংস্থার সমস্ত বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। যাতে সেগুলি কোনোভাবেই বেহাত হতে না পারে।

৬) অবৈধ অর্থ লগ্নি সংস্থার কিছু স্বার্থান্বেষী অনুরাগীরা বিভিন্ন ভাবে অসম্মান ও আক্রান্ত করছে অসহায়

প্রতারিত আমানতকারিদের তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবী থেকে সরিয়ে আনতে। অসংখ্য মানুষ ঘরছাড়া।

ইতিমধ্যেই সেই অসম্মান ও অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যাসহ তিন শতাধিকের বেশি মানুষের

মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়া মানুষদের ঘরে ফিরিয়ে এই অবৈধ আক্রমণকে প্রশ্রয় না দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে

অবিলম্বে অসহায় প্রতারিত মানুষের যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

উপরোক্ত ন্যায্য দাবিতে আমরা এক জমায়েত ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করতে চলেছি আগামী ৪ জুলাই, ২০২২, সোমবার বেলা ১টার সময় ধর্মতলায় ওয়াই চ্যানেলে। সেখান থেকেই রাজভবন ও নবান্নে গিয়ে আমরা আমাদের দাবিসনদ রাজ্যের মাননীয় রাজ্যপালের এবং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেব ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায়।

Leave a Reply