Spread the love

ক্ষয়িষ্ণু সময়ের নগ্ন কুৎসিত চেহারার ভাঙ্গাচোরা অন্ধকার

সময়ের প্রেক্ষিতে ফিরে দেখা মৃণাল সেনের খণ্ডহর

       খায়রুল  আনাম

বোলপুর,   বয়সের ভারে মানুষের ন্যুব্জ হয়ে যাওয়া শরীর আর পলেস্তার খসে পড়া বনেদি বাড়ির ইট, কাঠ, কড়ি-বরগার মধ্যে মানব শরীরের উপস্থিতি আর হাঁ  মুখ  করে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাণহীন ইমারত যে কত কথা বলতে পারে, তার সার্থক উদাহরণ  করে রেখে গিয়েছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন তাঁর ‘খণ্ডহর’ চলচ্চিত্রের  মাধ্যমে।  মৃণাল সেন তাঁর নিজস্ব চিত্রনাট্যে ১৯৮৩ সালে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করার জন্য বেছে নিয়েছিলেন বোলপুর- শান্তিনিকেতনের অনতিদূরের রাইপুর গ্রামের প্রখ্যাত জমিদার সিংহ পরিবারের ধ্বংসপ্রাপ্ত  সুবিশাল ইট-কাঠ, কড়ি-বরগার বনেদি বাড়িটি। নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি অভিনীত  এই চলচ্চিত্রটির জন্য শিকাগো চলচ্চিত্র  উৎসবে মৃণাল সেন যেমন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার  পেয়েছিলেন তেমনি  শ্রেষ্ঠ  অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন শাবানা আজমি।

    প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক  মৃণাল সেন তাঁর জীবনে যে  ২৮ টি চলচ্চিত্র  তৈরী করেছেন তাঁরমধ্যে ২৬ টি চলচ্চিত্রের  দুষ্প্রাপ্য  প্রচারপত্র, চলচ্চিত্র  পুস্তিকা ও বিজ্ঞাপনের প্রতিলিপির দু’দিনের একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হলো  শনিবার ৬ জানুয়ারি রাইপুর জমিদার বাড়ির অন্দর মহলে।  এটির পরিকল্পনা ও রূপায়ন করেছেন  অরিন্দম সাহা সরদার। আর স্থানীয় যুবক সুকেশ মণ্ডল তাঁর রাইপুর-সুপুর অঞ্চল-এর মতো প্রামাণ্য  গ্রন্থের মধ্যে দিয়ে এখানকার সমস্ত কিছুকে লিপিবদ্ধ করেছেন। এদিন সেই গ্রন্থটিও প্রকাশ করা হয়।  এখানে একটি প্রদর্শনীর মধ্যে দিয়ে মৃণাল সেনের জীবনজোড়া যে সৃজনকর্মের উপস্থাপনা করা হয়েছে তা মৃণাল সেনের কথারই প্রতিধ্বনিত অনুরণনে  যেন উচ্চারিত হয়েছে–পৃথিবী ভাঙছে পুড়ছে ছিন্নভিন্ন হচ্ছে তবুও  মানুষ বেঁচেবর্তে থাকে মমত্বে  ভালোবাসায় সহমর্মিতায়।  মৃণাল সেন  নির্মিত বাইশে শ্রাবণ,  প্রতিনিধি,  ভুবন সোম,  ইন্টারভিউ,  একদিন প্রতিদিন,  আকালের সন্ধানে,  খারিজ,  জেনেসিস, মহা পৃথিবী, অন্তরীন থেকে খণ্ডহরের মতো ছবির  বহু দুষ্প্রাপ্য ছবি, পোস্টারে  শাবানা আজমি, ডিম্পল কাপাডিয়া, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,  মাধবী মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী  চট্টোপাধ্যায়,   অনুপ কুমার, ওম পুরী প্রমুখের মুখগুলি যেন বড় বেশি করে যেমন চেনা হয়েছে তেমনি,  মহিলার গায়ে জড়ানো কম্বলের ভিতর দিয়ে দেখাকে যেন স্পষ্টভাবে দেখাকে মনে হলো–সেই তরুণী যামিনী। দুঃখী দূরবর্তিনী, বিষণ্ণ,  একাকী।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *