Spread the love

গুসকরা বীট হাউসের উদ্যোগে পালিত হলো আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস,

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,

     আমাদের সাধের পৃথিবী একটাই। অথচ নিজেদের ভুলে সেই পৃথিবী এবং পৃথিবীর মানুষ আজ চরম বিপদের মুখে।   তাইতো যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সার্বিক জনসচেতনতা তৈরী করার দিকে লক্ষ্য রেখে  আজ আমাদের কার্যত প্রতি মাসে একটি করে বিশেষ দিবস পালন করতে হচ্ছে। সমগ্র  বিশ্ব জুড়ে পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলির অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস।

    সমগ্র  বিশ্বে মাদক দ্রব্য পাচার ও ব্যবহার এক গভীর সমস্যা সৃষ্টি করছে। মাদক দ্রব্য ব্যবহারের জন্য ব্যক্তির সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমাজ। নিয়মিত মাদক দ্রব্য গ্রহণের ফলে ব্যবহারকারীদের শরীর ও মনে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।  পুরোপুরি মাদক দ্রব্যের উপর সে  নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যার শেষ পরিণতি  মৃত্যু। শুধু তাই নয় তার পরিবারে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসে এবং সমাজে অপরাধমূলক কাজকর্ম বৃদ্ধি পায়। তাই সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য মাদক ব্যবহার ও পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও সচেতনতা  গড়ে তোলার প্রয়োজন হয়। প্রসঙ্গত হেরোইন, ফেনসিডিল, মারিজুয়ানা প্রভৃতি হলো নিষিদ্ধ ড্রাগ। 

      নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি প্রচুর আফিম চীনে রপ্তানি করত। মনে করা হয় এটাই ছিল প্রথম মাদক। এই মাদক ব্যবহার করে চীনের আপামর জনগণ নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এই সর্বনাশা আফিমের হাত থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করার জন্য চীন সরকার মরিয়া হয়ে ওঠে। ১৮৩৯ সালের ২৬ শে জুন চীনে আফিম ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয়।১৯৮৭ সালের জুন মাসে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি সভায় মাদক দ্রব্য পাচার ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘ ২৬ শে জুন তারিখটি আন্তর্জাতিক মাদক পাচার বিরোধী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ও ১৯৮৯ সালের ২৬ শে জুন তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য ছিল  মাদক দ্রব্য  ও তার পাচারের কুফল সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা ।

  প্রতিবছর সারা বিশ্বে এই দিনটিতে   বিভিন্ন পদযাত্রা ও পোস্টার  তৈরির মাধ্যমে জনসচেতনতা গড়ে তোলা হয়। পেছিয়ে নাই গুসকরা পৌরসভা। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গুসকরা বিট হাউসের উদ্যোগে গুসকরা শহরে বের হয় মাদক বিরোধী মিছিল। মিছিল শুরু হয় গুসকরা শিরিষতলা সংলগ্ন বিদ্যাসাগর হল থেকে এবং শেষ হয় বাসস্ট্যান্ডে। মিছিলে পা মেলান স্হানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার, গুসকরা পৌরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী সহ প্রত্যেক কাউন্সিলর, গুসকরা আবগারী দপ্তর ও ট্রাফিক গার্ডের আধিকারিক সহ গুসকরা বিট হাউসের প্রতিটি পুলিশ আধিকারিক এবং বেশ কিছু সাধারণ মানুষ।

  পরে বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার আজকের দিনটি কেন পালন করা উচিত সেটা ব্যাখ্যা করেন এবং যুব সমাজকে সমস্ত রকম ড্রাগ থেকে দূরে সরে থাকার আহ্বান জানান।

    মাদকের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলার সম্পর্ক থাকলেও নিজেদের দৈনন্দিন 'ডিউটি' পালন করার পরেও যেভাবে গুসকরা বিট হাউস এই মাদক বিরোধী সচেতনতা মিছিলের আয়োজন করেছে তার জন্য পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী শহরবাসীর পক্ষ থেকে প্রত্যেক পুলিশ আধিকারিককে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন - ড্রাগের সর্বনাশার হাত থেকে সমাজ তথা যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে শুধু প্রশাসন নয় প্রতিটি অভিভাবককে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের সন্তান তথা পরিবারকে সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে।

     পুলিশ প্রশাসনের সচেতনতা মিছিলের কথা শুনে বিশিষ্ট কনসালটেণ্ট তানেয়া মুখার্জ্জী তাদের অভিবাদন জানিয়ে বললেন 
  • সমাজে পুলিশের খাকি পোশাকের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। আশা করা তাদের প্রচেষ্টা সফল হবে। তিনি আরও বললেন- সাধারণত সমাজে ‘কাল্ট’ ফিগার সাজার লোভে যুব সমাজ প্রথমে ড্রাগ গ্রহণ করে। তারপর তাতে আসক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে হতাশা বা ‘ডিপ্রেশন’ তো আছেই। যুব সমাজ ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে যদি এলাকা ভিত্তিক আলোচনা সভার, বিশেষ করে উৎসবের আগে, আয়োজন করা যায় তাহলে অনেক উপকার হবে। সমাজকে যদি ড্রাগ মুক্ত না করা যায় তাহলে ক্ষতি অবধারিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *