Spread the love

অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি, হাসি ফুটল চাণক অঞ্চলের চাষীদের মুখে

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে মেঘের গর্জন। বৃষ্টির আশায় চাতক পাখির মত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা চাষীদের হতাশ করে দিয়ে সরে যাচ্ছে  মেঘ, বৃষ্টি আর হয়না। গত কয়েকদিন ধরে বারবার এই দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে। এলাকায় সেচখাল আছে ঠিকই, কিন্তু শেষ কবে চাষের জন্য জল এসেছিল বলতে পারলেন না অনেক প্রবীণ চাষী। সাবমার্শিবল থেকে জল কিনে আমন ধান রোপণ করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টিহীনতার জন্য ভরা বর্ষায় গ্রীষ্মের মত ফাটল দেখা দিয়েছে ক্ষেত জমিগুলোতে। স্বাভাবিক কারণেই চিন্তিত হয়ে পড়েছে চাণক অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের চাষীরা। 

 চাঁদ হেমরম, লক্ষীরাম কোঁড়া, সৌভিক সিকদার, তাপস বিশ্বাসরা প্রতিদিন অভ্যাসমত মাঠে যাচ্ছে, করুণ দৃষ্টিতে ক্ষেত জমির দিকে তাকিয়ে  হতাশ হয়ে ফিরে আসছে। বৃষ্টি নাহলে সন্তান রূপী ধান গাছগুলো হয়তো আর বাঁচানো যাবেনা।  ধানের ফলন না হলে সারাবছর সংসার চলবে কি করে! কতই বা জল কিনে অথবা নদী থেকে মেসিনের সাহায্যে জল তুলে চাষ করা যাবে। ডিজেলের দাম তো কম নয়!

গত কয়েকদিনের মত ২৪ শে আগষ্ট সকাল থেকেই ঘন মেঘের আনাগোনা শুরু হয়। এদিকে গরমও ছিল খুব। বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলেও চাষীরা মন থেকে মানতে পারছিলনা। বৃষ্টি হবে তো - এই আশঙ্কা যখন তাদের গ্রাস করছিল ঠিক তখনই দুপুর ১ টা নাগাদ শুরু হয় বৃষ্টিপাত। বৃষ্টির তেজ ছিল যথেষ্ট। প্রায় ঘণ্টা দু'য়েক পর যখন বৃষ্টি থামে তখন চাষীদের মুখে হাসি দেখা যায়।

গণপুরের প্রবীণ চাষী চাঁদ হেমরম বললেন - গত কয়েক বছর ধরেই এরকম অনিশ্চিত অবস্থায় আমন ধান চাষ করতে হচ্ছে। ক্যানেলের জলটা পেলে তাও চাষটা ভাল করে করতে পারি। 

বালিডাঙার চাষী সৌভিক শিকদার বললেন – ডিজেলের যা দাম তাতে তেল কিনে কুনুর নদী থেকে জল তুলে চাষ করা সত্যিই কষ্টকর। সরকার যদি এলাকায় সেচ ব্যবস্থার উন্নতি করত তাহলে হয়তো কিছুটা চিন্তামুক্ত হতাম।

কথা হচ্ছিল আমেরিকায় গবেষণারত বাঙালি বিজ্ঞানী বিশ্বরূপ ঘোষের সঙ্গে। তিনি বললেন – আমি চাষী বাড়ির সন্তান। বিদেশে থাকলেও নিয়মিত এলাকার চাষীদের সঙ্গে কথা হয়। প্রকৃতির উপর আমাদের হাত নাই ঠিকই, কিন্তু নদী সংযোগ প্রকল্পকে যদি বাস্তবায়িত করা যায় তাহলে যেসব এলাকা অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বন্যায় ভেসে যাচ্ছে সেখানকার নদীর জল খরাপ্রবণ এলাকার শুষ্ক নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করলে হয়তো সেচখালের মাধ্যমে চাষের কিছুটা সুরাহা হতো। শুধু বৃষ্টির উপর নির্ভর করলে অনেক চাষী হতাশ হয়ে পড়বে। দেশের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে। পাশাপাশি কম জল ব্যবহার করে বিকল্প পদ্ধতিতে ধান চাষের কথা ভাবতে হবেই। যে দেশের বিজ্ঞানীরা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে চন্দ্রাযান পাঠাতে পারে সুযোগ সুবিধা পেলে তাদের পক্ষে বিকল্প চাষ-আবাদ পদ্ধতি আবিষ্কার করা অসম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *