খায়রুল আনাম,
ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে অসন্তোষ বাড়ছে
জেলা বীরভূমের মহকুমা শহর রামপুরহাটে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ চালু হওয়ার সময় থেকেই, এখানকার পরিকাঠামো নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। সেইসব সমস্যা সমাধানের কথা বার বার বলা হলেও, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার রামপুরহাট মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের বছর কুড়ি বয়সী ছাত্রী মধুমিতা ঘোষের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যেই তাঁরা হোস্টেলের দাবিতে আধিকারিকদের ঘেরাও করে তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজিতকুমার দে জানান যে, পড়ুয়াদের দাবি মতো আপাতত ছাত্রীদের ইন্টার্ন হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ছাত্রদের ক্যাম্পাস চত্ত্বরের হোস্টেলে নিয়ে আসার ব্যাপারে ডাইরেক্টর অফ মেডিকেল এডুকেশনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রামপুরহাট মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী মধুমিতা ঘোষের ঝুলন্ত মৃতদেহ পাওয়া যায় চকমণ্ডলপুর গ্রামে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের চারতলার একটি বন্ধ ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায়। তাঁর সহপাঠী বান্ধবীরা তাঁর দেখা না পেয়ে সন্ধান শুরু করেন। তারপরই একটি ঘর ভিতর থেকে বন্ধ দেখে তাঁরা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশে খবর দিলে, পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে। মৃতা ছাত্রী মধুমিতা ঘোষের বাড়ি বাঁকুড়ার রাইপুরে। একদিন আগেই মধুমিতার বাবা বীরেন্দ্র ঘোষ স্ত্রীকে নিয়ে রামপুরহাটে এসে মেয়ের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরে যাওয়ার পরই মেয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে পুনরায় রামপুরহাটে এসে পৌঁছান অন্য কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে। তিনি মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত দাবি করে রামপুরহাট থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেন। মধুমিতার মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পরে তা তাঁর বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়। রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ মধুমিতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে ছ’জনের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে। মধুমিতাকে প্রথম বর্ষেরই তিনজন ছাত্র উত্ত্যক্ত করতো বলেও ইতিমধ্যেই অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে। রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হোস্টেলটি রয়েছে মেডিকেল কলেজ থেকে দশ কিলোমিটার দূরে চকমণ্ডলা এলাকায়। সেখানে ৬২ জন ছাত্র এবং ৩৪ জন ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে এতো সংখ্যক পড়ুয়াকে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা ও ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মেডিকেল কলেজ থেকে একটি মাত্র বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। যাতে এতো সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে গাদাগাদি করে যাওয়া-আসা করতে হয়। ওই এলাকায় অন্য কোনও গণপরিবহন ব্যবস্থা না থাকার ফলে কারও জরুরী কোনও প্রয়োজন পড়লে, তাঁকে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। এমন কী ওই এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় কোনও সামগ্রী কেনাকাটা করারও সুবিধা নেই। মধুমিতার মৃত্যুর জেরে সমগ্র পরিস্থিতিই এখন খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।।