খায়রুল আনাম (সম্পাদক সাপ্তাহিক বীরভূমের কথা )
জয়দেব-কেন্দুলিতে জাঁকিয়ে পড়া শীতে হালকা ভীড়ের মকরস্নান
ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে পাঞ্জা দিয়ে লড়লো সংখ্যাতত্ত্বের হিসেব। কেননা, ধর্মীয় বিশ্বাসে বীরভূমের ইলামবাজারের জয়দেব-কেন্দুলিতে অজয় নদে মকর স্নান করলে, গঙ্গাস্নানের পুণ্যলাভ ঘটে। সেই বিশ্বাসে কয়েকশো বছর ধরে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে জয়দেব-কেন্দুলিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী অজয় নদে পুণ্যস্নান করে থাকেন। সেই সংখ্যাটা গত কয়েক বছর ধরে পাঁচ লক্ষ ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। এই উপলক্ষে জয়দেব-কেন্দুলিতে একটি মেলাও বসে। সরকারিভাবে চারদিনের মেলায় নানান অনুষ্ঠানের সাথে এই মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো বাউল গানের আসর আর বিভিন্ন আশ্রমে সাধুসঙ্গের সাথে সাথে গাঁজার কলকেতে বেদম দমের সুখটান। জাঁকিয়ে বসে কীর্তনের আসরও। কয়েকশো আখড়ায় বিনা পয়সার খিঁঁচুড়ি ভোগ এই মেলার অন্যতম আকর্ষণও। কিন্তু এবার করোনা আবহে সবই ফিকে। মকর সংক্রান্তিতে যে জয়দেব-কেন্দুলিতে থাকে চিঁড়েচ্যাপ্টা ভীড়, এবার সেখানে জাঁকিয়ে পড়া শীতে অনেকটা হাল্কাভাবেই রোদ পোহাতে পোহাতে ঘোরা যাচ্ছে জয়দেব-কেন্দুলির মেলায়। সরকারিভাবে এবার দু’দিনের ছাড়পত্রে জয়দেব-কেন্দুলিতে হয়েছে অজয় নদে স্নানের ব্যবস্থা। বসতে দেওয়া হয়নি কোনও মেলা। হলো না সরকারিভাবে মঞ্চ বেঁঁধে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও। কেবলমাত্র গুটি কয়েক স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে হস্তশিল্প সামগ্রী বিপণনের। আর মকরে স্নান করলেন হাজার কুড়ি মানুষ। শ’খানেক আখড়া বসার অনুমতি দিলেও ভক্ত সমাগম না হওয়ায় তা সীমাবদ্ধ থাকলো গোটা ত্রিশে। সরকার পরিচালিত এই মেলায় প্রশাসনের দিক থেকে অবশ্য সমস্ত ধরনের পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া হয়েছে। স্নানার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সে জন্য নদের ঘাটগুলিতে স্নানের জন্য নদের মধ্যে বাঁশের বেড়া দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। নদের চড়ে করা হয়েছে আলো ও পানীয় জলের ব্যবস্থা, মেলার প্রতিটি প্রবেশ পথে রাখা হয়েছে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা, দশটি ড্রপ গেটের মাধ্যমে সে সবই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ১৭টি পুলিশ বুথের মাধ্যমে পুরুষ ও মহিলা পুলিশ কর্মীরা নিরাপত্তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রয়েছেন সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মীরাও। ৯২ টি সিসিটিভি ক্যামেরা ও ১১ টি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে নজরদারি, যানবাহনের জন্য করা হয়েছে ৫ টি পার্কিংজোন। আর বর্তমান অতিমারি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তৈরী করা হয়েছে ২০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল ।
ছবি : শুনশান মন্দির এলাকা।
94 12,89,834