উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়, , কুলতলি :
বয়স হয়ে গেলে মানুষ অসহায়। ছেলে মেয়েদের কাছে বোঝা হয়ে যায়। আর তাই জন্ম দেওয়া পিতা মাতার তখন ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রম নতুবা কোনো ও আস্তা কুঁড়ে। এক লহমায় সব বিশ্বাস, আস্থা, সম্পর্ক চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এক হতভাগ্য বৃদ্ধ পিতার মৃত্যুর মর্মান্তিক সেই ঘটনার সাক্ষী থাকলো সুন্দরবনের কুলতলি।আর ও একবার আমাদের মানবতাকে লজ্জার আঁচলে মুড়ে দিয়ে গেল।নিজেরাই নিজেদের কাছে ছোটো হয়ে গেলাম আরো একবার। ঘটনায় প্রকাশ,তিন ছেলে, তিন মেয়ের বাবা কাদের খান।ছয় সন্তানদের নিয়ে সুখের সংসারে দিন কাটাচছিলেন ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ধানবাদের নিজের বাড়িতে।আসলে সেটা সুখের আড়ালে কি ছিল কাদের খান তা বুঝতে পারি নি। ছেলেরা প্রায়ই বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতে চাইতেন। তাতে বাবার তেমন কোনো সায় বা উৎসাহ ছিল না। অনেকটা জোর করেই ছেলেরা বেড়ানোর নাম করে গত ডিসেম্বরের শেষে নিয়ে আসে সুন্দরবনে এবং পরিকল্পনা মাফিক বৃদ্ধ বাবাকে সুন্দরবনে ফেলে রেখে তাঁরা পালিয়ে যায়।ঘটনাটি স্থানীয় মানুষদের নজরে আসে এবছর জানুয়ারির ২ তারিখে।স্থানীয় মানুষজন কুলতলির মৈপীঠের বিনোদ পুর গ্রামের কাঁচা রাস্তার উপর এক অসুস্থ বৃদ্ধ কে পড়ে থাকতে দেখে। জানাজানি হতেই স্হানীয় স্বাস্থ্য কর্মীরা প্রথমে মৈপীঠ ভুবনেশ্বরী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও পরে কুলতলি ব্লক জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করে দেন। অভুক্ত কাদের খান তখন ও প্রচন্ড দুর্বল।সেখানে চিকিৎসা শুরু হয়। সময় গড়াতে থাকে। কিন্তু কেউ খোঁজ নিতে না আসায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।তাকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা অনেশ্বা কাউন্সিলর সূপর্ণা কন্টের কাছে অসুস্থ কাদের খান কথায় কথায় বাড়ির নানা সুখ স্মৃতির কথা তুলে ধরেন। তাকে ফেলে রেখে ছেলেরা চলে গেছে একথা কিছুতেই শুনতে চাইতেন না, উল্টে তাদের বলতেন, ও লোগ জরুর আয়েগা, হো সাকতা মেরা লাড়কা কাম মে ফাস গিয়া। বেড়াতে এসে কি ভাবে ছেলেদের থেকে আলাদা হয়ে গেলেন তা বলতে পারেননি। বাড়ির ঠিকানা, পরিবারের লোক-জন সবার কথা বলতেন। মাঝে মাঝে বাড়ির লোকজনদের খুঁজতে হাসপাতাল বেড থেকে বাইরে চলে আসতেন। ভালোবাসার টানে শনিবার আবার ছেলেদের খুঁজতে বাইরে এসেই মৃত্যু হলো হত ভাগ্য পিতা কাদের খানের।কুলতলি ব্লক হাসপাতালের অনেশ্বা কাউন্সিলার সূপর্ণা কন্ট বলেন,বৃৃদ্ধ বয়সে বাবা মার সাথে এ ধরণের ব্যবহার কাম্য নয়। বেড়ানোর নাম করে অত দূর থেকে এখানে ছেড়ে পালিয়ে যায় ঐ বৃদ্ধর ছেলে মেয়েরা। অথচ মৃত্যুর আগে অবধি সে তাঁর সন্তানদের কতটা ভালোবাসত।এভাবে এই মৃত্যু কিছু তেই মেনে নিতে পারছিনা।খুব কস্ট হচ্ছে । কুলতলি থানার পুলিশ কাদেরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের বহু চেষ্টা করলে ও রবিবার বিকাল পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি পরিবারের।তাই কাদেরের মৃতদেহ এখন স্থান পেয়েছে মর্গে।পথ চেয়ে ছেলেদের হাতে সমাধিস্থ হবার অপেক্ক্ষায়।