খায়রুল আনাম,
রাজ্য সীমান্তের গ্রামে মাওবাদী পোস্টার ঘিরে চাঞ্চল্য
জেলা বীরভূমের ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানা লাগোয়া খয়রাশোল ব্লকের লোকপুর থানার খড়িকাবাদ গ্রামের একাধিক দেওয়ালে সোমবার সকালে মাওবাদীদের নামে সাঁটানো পোস্টার দেখা গেলে এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মুখে মুখে মাওবাদীদের নামে পড়া পোস্টারের কথা ছড়িয়ে পড়তেই বহু মানুষ এসে সেইসব পোস্টার চাক্ষুষ করেন। কিন্তু আতঙ্কে কেউ পোস্টারে হাত দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি। সাদা কাগজের উপরে লাল কালিতে সাধারণ মানের লেখায় মাওবাদীদের নামে পড়া ওইসব পোস্টারে হেরাফেরি চলবে না, পুলিশ প্রশাসন মুর্দাবাদ, মাওবাদ জিন্দাবাদ লেখা ছিলো। খবর পেয়ে লোকপুর থানার পুলিশ গিয়ে পোস্টারগুলি খুলে নিয়ে আসে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাব মনে করা হয়েছে যে, এটি আদৌ মাওবাদীদের কাজ হতে পারে না। স্থানীয়ভাবেই কেউ বা একাধিক ব্যক্তি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই কাজ করেছে। তবুও পুলিশ এ ব্যাপারে স্থানীয় মানুষজনদের সাথে কথা বলে, সমগ্র বিষয়টি খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। বিশেষ করে পোস্টারে ‘পুলিশ প্রশাসন মুর্দাবাদ’ লেখা থাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কিছুদিন আগেই চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর জেলার ইলামবাজার ব্লকের পাঁড়ুই থানা এলাকার গোলাপবাগ, চৌমণ্ডলপুর-সহ একাধিক জায়গায় একইভাবে সাদা কাগজের উপরে লাল কালিতে লেখা মাওবাদীদের নামে পোস্টার পড়েছিল। তাতে এলাকার শাসক দলের বিভিন্ন পদাধিকারী এবং পঞ্চায়েতস্তরের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল ওইসব পেস্টারে। সেই সময়ও পুলিশ পোস্টারগুলি খুলে নিয়ে গিয়ে এ ব্যাপারে তদন্তের কথা বললেও, সেই ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি। এবার খয়রাশোল এলাকায় মাওবাদীদের নামে পোস্টার পড়ায় স্থানীয় মানুষদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমান্তের খয়রাশোল এলাকা এক সময় রীতিমতো মাও অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। এই এলাকায় মাওবাদীরা একাধিক নাশকতামূলক কাজ করায়, ওই এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। একাধিক খুনের ঘটনা ছাড়াও ভীমগড় এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রেললাইন উড়িয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। বীরভূম-ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমান্তের পরিস্থিতি সেই সময় এতটাই উত্তপ্তকর হয়ে উঠেছিল যে, ঝাড়খণ্ড ও বীরভূম জেলা পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা একাধিকবার বীরভূমের আব্দারপুরে আলোচনায় বসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। প্রশাসনিক নজরদারি বাড়াতে খয়রাশোল থানাকে ভেঙে চন্দ্রপুর ও লোকপুর থানা গঠন করা হয়। পরে মাও শীর্ষ নেতা কিষাণজির মৃত্যুর পরে, অন্যান্য জায়গার মতো এখানেও মাওবাদীদের প্রকাশ্য তৎপরতা আর লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু, মাওবাদীরা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে, এটা এখনও মনে করেন না এলাকার মানুষজন। তাই সেই এলাকায় আবারও মাওবাদী পোস্টার পড়াকে একেবারেই হালকাভাবে নিতে পারছে না এলাকার মানুষজন ।।