সুরজ প্রসাদ
সপ্তাহ দু’য়েক পর অবশেষে বর্ধমানে বৃদ্ধ খুনের কিনারা করতে সক্ষম হল পুলিশ।খুনের অভিযোগে রনিথ দত্ত নামে এক যুবককে বর্ধমান থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ধৃত রনিথ দত্ত বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখার্জী বলেন নেশার জন্য টাকা না পেয়েই রনিথ খুন করে বৃদ্ধকে
গত ৩ জুন শুক্রবার বিকালে খুন হন গোরাচাঁদ দত্ত(৮৪) নিজের বাড়িতেই। বর্ধমান শহরের তেজগঞ্জ স্কুলপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ওই দিন বাড়িতে একাই ছিলেন অশীতিপর। অর্ধনগ্ন অবস্থায় উবুর হয়ে রক্তাক্ত ভাবে মেঝেতে পড়ে ছিলেন গোরাচাঁদবাবু। তার স্ত্রী মীরা দত্ত ওইদিন সকালে শহরের জিলিপি বাগানে বোনের বাড়ি গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন বাড়িতে এক যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে। কি হয়েছে জানতেই, ওই যুবক মীরাদেবীকে বলেন কি হয়েছে ঘরে ঢুকে দেখুন। তারপর হলুদ গেঞ্জি পড়া ওই যুবক চলে যায়। বাড়িতে ঢুকে মীরাদেবী দেখেন, রক্তান্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন স্বামী। টিভিটা দরজার সামনে টানা ছিল। আলমারি খোলা। বিছানা ওলটপালট । খাটের ঠিক নীচে পড়ে রয়েছে দেহ।ঘরের জিনিষপত্র, আসবাব সহ সমস্ত জিনিসই তছনছ অবস্থায় ছিল ।
মৃত বৃদ্ধের আদি বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের তেলুয়ায়। গোরাচাঁদ দত্ত দুর্গাপুরের ডিএসপিতে চাকরি করতেন। পরে তিনি বর্ধমানের তেজগঞ্জে বাড়ি করেন।
পরদিন সিআইডির দুই সদস্য ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞ শুভাশিস হালদার ও শৈবাল দত্ত বাড়িতে গিয়ে ঘটনাস্থলের নমুনা সংগ্রহ করেন।ঘন্টা খানেক ধরে তাঁরা বাড়ির বিভিন্ন জায়গা ঘুরেও দেখেন।
১১ জুলাই ফের সিআইডি তিন সদস্যের টিম খুনের তদন্তে আসেন। ঘন্টাখানেক ধরে বৃদ্ধের বাড়িতে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করেন। তারা গোটা ঘরের আনাচে-কানাচে ঘুরে দেখেন। সিআইডির দুই ফরেন্সিক অফিসার হরেন্দ্রনাথ সিংহ ও তীর্থঙ্কর সরকার মূলত অপরাধীর স্কেচ তৈরি করার জন্যই ওইদিন তদন্তে আসেন।সঙ্গে ছিলেন বর্ধমান থানার আইসি পিন্টু সাহা ও এসডিপিও (সদর) শৌভিক পাত্র।
গতকাল পুলিশ রনিথকে গ্রেপ্তার করে।
এদিন ধৃতকে বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখার্জী বলেন নেশার টাকার জন্য ওইদিন গোরাচাঁদ দত্তের বাড়ি যায় রনিথ।রনিথের সঙ্গে পূর্ব পরিচয় ছিল গোরাচাঁদবাবুর।রনিথদের বাড়ি থেকে দুধ নিতেন তিনি।সেই সূত্র ধরেই গোরাচাঁদ বাবুর সঙ্গে রনিথদের পরিবারের যোগাযোগ ছিল।ওই দিন তিনি একাই ছিলেন।নেশাগ্রস্ত অবস্থাতেই ওইদিন রনিথ গোরাচাঁদবাবুর বাড়িতে যায় টাকা চাইতে।তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করায় শুরু হয় বচসা। বাগবিতণ্ডার সময় হঠাৎই ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে বৃদ্ধের গলায় আঘাত করে রনিথ।তারপর বিছানার তোলা থেকে আলমারির চাবি বেড়ে করে আলমারি খুলে টাকা পয়সা খোঁজে। কিন্তু টাকা পয়সা কিছুই পায় নি।বৃদ্ধের মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় রনিথ।
এরপর রনিথকে তার বাবা রতন দত্ত নেশা মুক্তি কেন্দ্রে দিয়ে আসে।কারণ নেশার প্রবণতা বেড়ে যায়। প্রতিবেশীদের বাড়িতে চুরি করা শুরু করে।ধৃতের বাবা বলেন রনিথ বেশ কয়েক বছর ধরেই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে।কিন্তু ওর কাছে হেরোইন পাওয়ায় তাকে নেশা মুক্তি কেন্দ্রে দিয়ে আস হয়।