জ্যোতিপ্রকাশ মুখার্জি
মাঝে মাত্র দুটো মাস। ২০১৯ এর জানুয়ারী মাসে প্রথমে বাবা এবং পরে এপ্রিলে মারা গেলেন কাকা। মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়ল বীরভূমের সাঁইথিয়ার হাতোড়া অঞ্চলের অমরপুর গ্রামের সদ্য এম.এ পাস করা সুকুমার বাগ্দীর। বাবা-কাকার চোখে স্বপ্ন ছিল ছেলে পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি হয়তো পাবে। ফলে সংসারের অভাব কিছুটা দূর হবে। তাই নিজেরা লোকের জমিতে মজুর খেটেছে, কষ্ট করেছে তবুও ছেলের পড়াশোনার ক্ষতি হতে দেয়নি। কিন্তু মাঝপথে বি.এড চলাকালীন বাবা-কাকা চলে গেলেন। বি.এড সম্পূর্ণ করার চিন্তা তো দূরের ভাবনা, কিভাবে দুবেলা দু’মুঠো খাবার জুটবে সেই দুঃশ্চিন্তায় চোখের ঘুম নষ্ট হলো চার-ভাইবোনের বড়দাদা সুকুমারের। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে।মেজ বোন অর্চনা পড়ে দশম শ্রেণিতে, ছোট বোন রচনা সপ্তম শ্রেণিতে এবং ছোট ভাই জয়গোপাল পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে । পেটে দু’বেলা ভাত না জুটলেও সুকুমারকে পড়া ছাড়তে দিলেন না মা-কাকিমা। তারা লোকের জমিতে মজুরি খাটতে বা লোকের বাড়িতে কাজ করতে শুরু করলেন। লকডাউনের সময় বি.এড কলেজ বন্ধ থাকায় বাড়িতে থাকার সুবাদে সুকুমারও মা-কাকিমার সঙ্গে মজুর খাটতে শুরু করে। খরচ বাঁচানোর জন্য সরকারের দেওয়া টাকায় বাড়ি তৈরি করার সময় মাথায় ইঁট বহন করে রাজমিস্ত্রীকে সাহায্যও করে।
সুকুমারের মা মেনকা বাগ্দী বললেন – আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলেও দেওরের দুই মেয়ে ও এক ছেলে আছে। বড়দাদা হিসেবে ওদের মানুষ করার দায়িত্ব সুকুমারের। এখন সরকার ছেলেটার যদি একটা চাকরির ব্যবস্থা করে তাহলে খুব উপকার হয়। অন্তত ছেলে-মেয়েগুলোর পড়াশোনাটা মাঝপথে বন্ধ হয়না। একই কথা শোনা গেল সুকুমারের কাকিমার মুখেও।
বাবা-কাকা ও মা-কাকিমার অবদানকে মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করার পর সে সুজন, সুতর্ণা, পাপিয়া ও তৃণার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। এদের সঙ্গেই সে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রামপুরহাট ক্যাম্পাসে এম.এ করে। এরা প্রত্যকেই, বিশেষ করে স্হানীয় একটি টি.ভি চ্যানেলের সংবাদ পাঠিকা তৃণা, সুকুমারের দিকে নিজেদের সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সুকুমারের ভাষায়- এরা না থাকলে তার পক্ষে এম.এ বা বি.এড সমাপ্ত করা সম্ভব হতো না। এরা প্রত্যেকেই চায় সরকার যেন সুকুমারের একটা চাকরির ব্যবস্হা করে।
