কাঁকুড়গাছির খুনের মামলায় ধৃত পুলিশ কর্মীদের জামিন চেয়ে বাদানুবাদে জড়ালেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মামলায় অব্যাহতি নিলেন বিচারপতি
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
শুক্রবার কাঁকুড়গাছির বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার খুনের মামলায় তথ্য প্রমাণ লোপাটে অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মী রিনা সরকার ও দীপঙ্কর দেবনাথের জামিন মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়ালেন বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । এই বাদানুবাদের জেরে মামলা থেকেই সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ। এদিন এই মামলায় রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান , -‘ এই দুই পুলিশ আধিকারিককে সিবিআই প্রথমে সাক্ষী হিসেবে দেখিয়েছিল, পরে হঠাৎ চূড়ান্ত চার্জশিটে তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছে’। অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ ছাড়াই তাঁদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, যা আইনসঙ্গত নয়। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষও সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। চার বছর ধরে সমন জারি হওয়া সত্ত্বেও কোনও গ্রেফতার হয়নি। হঠাৎ করে সমন জারি করে গ্রেফতার করা হল কেন?’ এই ধরনের প্রশ্ন উঠে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আইনজীবী সওয়ালে বলেন, -‘অভিযুক্তরা সমনের জবাব দিয়েছিলেন এবং জামিনের আবেদন করেছিলেন, যা নিম্ন আদালত খারিজ করে’। এর আগে নিম্ন আদালতে উঠে আসে যে, ‘এই মামলায় রক্ষকই ভক্ষক হয়ে উঠেছে। পুলিশের একাংশ ও রাজনীতির মধ্যে যোগসূত্র ছিল।’ এটি কলকাতায় ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনা, যার তদন্ত রাজ্যের উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের কাছে অন্তর্বর্তী জামিনের আর্জি জানান। সেসময় বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ জানান, ”এই শুনানিতে সময় লাগবে, আমি আগামী ২ সপ্তাহ এখানে নেই। সার্কিট বেঞ্চ পরবর্তীতে এই মামলার শুনানির জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলে আদেশ দেওয়া সম্ভব নয়।” তখনই রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আবেদন করেন, -‘অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিতে’। এই কথা শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ।সেই আর্জি তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি এই ধরনের আবেদনে সাড়া দেব না। মিস্টার বন্দ্যোপাধ্যায় আপনার বক্তৃতা আর সহ্য করব না।’ এরপর তিনি মামলাটি ফেরত পাঠান সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে।জানা গেছে, বিচারপতি আগামী দুই সপ্তাহ ছুটিতে থাকায় এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন এখনও স্থির হয়নি। এরফলে জামিনের আর্জি নিয়েই আপাতত অনিশ্চয়তায় রইলেন রিনা সরকার ও দীপঙ্কর দেবনাথ।উল্লেখ্য, শুক্রবার শুনানির শুরুতে কল্যাণ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তাঁর প্রশ্ন, ”চার বছর পর হঠাৎ কেন গ্রেফতার করল সিবিআই?” তার পরেই তাঁর মক্কেলদের অন্তর্বর্তী জামিন চান তিনি। তবে বিচারপতি ঘোষ জানান, আগামী সোমবার থেকে যেহেতু তিনি ১৫ দিন সার্কিট বেঞ্চে থাকবেন, তাই পরের অংশ ১৫ দিন পরে শুনবেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, এই মামলা আজই শেষ করে রায় দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এর মধ্যে অনেক আইনি দিক আছে। যদিও তার পরেও কল্যাণ অন্তর্বর্তী জামিনের জন্য বার বার আবেদন করেন। আর তাতেই রুষ্ট হন বিচারপতি ঘোষ। উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময়েই ভোট পরবর্তী হিংসায় উত্তর কলকাতার কাঁকুড়গাছির অভিজিৎ খুন হন। পরিবারের অভিযোগ, ফল প্রকাশের পরেই গলায় তার পেঁচিয়ে ও পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় অভিজিৎকে। প্রথমে নারকেলডাঙা থানার পুলিশ ওই ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছিল। পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশের থেকে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। এই মামলায় পুলিশ প্রথমে ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিল। পরে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম অতিরিক্ত চার্জশিট জমা করে সিবিআই। তাতে মোট ২০ জন অভিযুক্তের নাম ছিল, যাদের মধ্যে ১৫ জনের নাম পুলিশের জমা দেওয়া চার্জশিটেও ছিল। গত ২ জুলাই দ্বিতীয় অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।সেখানেই কয়েকজন পুলিশ কর্মী অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসেন।