‘সংরক্ষণ তো প্রশাসনিক বিভাগের কাজের অংশ’,ওবিসি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
সোমবার ওবিসি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করল দেশের শীর্ষ আদালত।এদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মামলার শুরুতেই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ভূমিকায় বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতিরা। কীভাবে একটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হল? সেই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ ঘোষণা করা হয়।ওবিসি-র শংসাপত্রের বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের ওবিসি সার্টিফিকেট সংক্রান্ত সব বিজ্ঞপ্তির উপর সম্প্রতি স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য।কলকাতা হাইকোর্টের ওই নির্দেশের উপর সোমবার স্থগিতাদেশ দিল শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চ।গত জুন মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ ওই বিজ্ঞপ্তির উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। ৩১ জুলাই পর্যন্ত ওই স্থগিতাদেশ জারি করেছিল আদালত। হাইকোর্টের ওই নির্দেশের ফলে কলেজে পড়ুয়াদের ভর্তির ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে কি না? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও আদালত আগেই স্পষ্ট করেছে যে, -‘এমন কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই’। তবে হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচাররপতি গবই, বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন এবং বিচারপতি এনভি অঞ্জরিয়ার বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়।সুপ্রিম কোর্টে গত সপ্তাহে এই মামলার শুনানির কথা থাকলেও প্রধান বিচারপতির এজলাস না বসায়, ওই সময় শুনানি হয়নি। সোমবার মামলাটি শুনানির জন্য উঠতেই হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি গবই বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে নোটিস জারি করব। এটা আশ্চর্যজনক! হাইকোর্ট কী ভাবে এমন করে স্থগিতাদেশ দিতে পারে? আমরা ভেবে অবাক হচ্ছি যে, কোন যুক্তিতে হাইকোর্ট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে!’ এদিন প্রধান বিচারপতি আরও জানান, -‘সংরক্ষণ তো কার্যনির্বাহ বা প্রশাসনিক বিভাগের কাজের অংশ’। এ বিষয়ে অতীতের একটি মামলার রায়ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি জানান, -‘ইন্দিরা সাহনী মামলার রায় থেকে স্পষ্ট যে প্রশাসন এই কাজ করতে পারে। সংরক্ষণের জন্য কার্যনির্বাহী বা প্রশাসনের নির্দেশই যথেষ্ট, এর জন্য আলাদা করে কোনও আইন তৈরির প্রয়োজন নেই’।সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ মৌখিক ভাবে জানিয়েছে,-‘ হাইকোর্টের নির্দেশকে ‘প্রাথমিক ভাবে ভুল’ বলে মনে করা হচ্ছে’। এ কথা জানিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি গবইয়ের মতে, বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। সেটি সঠিক হতেও পারে, না-ও হতে পারে। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে হাইকোর্ট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তবে বিতর্কিত এই নির্দেশের উপর আপাতত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি থাকবে।’এরপরেই রাজ্যের হয়ে সওয়ালকারী কপিল সিব্বল প্রধান বিচারপতির কাছে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশে স্থগিতাদেশ বসানোর আর্জি করেন। তাঁর যুক্তি, ‘হাইকোর্ট একটি অবমাননার মামলা দায়ের করেছে। তার মধ্যেই আবার স্থগিতাদেশও চাপিয়েছে। যার জেরে একাধিক নিয়োগ থেকে পদোন্নতি, সবই আটকে রয়েছে।’এরপরেই সব পক্ষের যুক্তি-তর্ক শোনার পর শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, -‘প্রাথমিকভাবে বোঝা যাচ্ছে হাইকোর্টের নির্দেশ ত্রুটিপূর্ণ। ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে শুনানি শেষ করতে হবে’।