নতুন দের স্বপ্ন এবার আকাশ ছোঁবে, আর এই আকাশ ছুঁতে গেলে আপনাকে কাস্টিং ক্যাম্পাস নামক উড়ানে চড়ে বসতেই হবে।
Kolkata, 2025: কাস্টিং ক্যাম্পাস, যারা অভিনয় করতে ভালোবাসেন এবং নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন তাদের কাছে এই নামটি অত্যন্ত পরিচিত। ২০১৬ সালে মূল ভাবনা আসে এবং ২০১৭ সালের জুন মাসের ৬ তারিখে জন্ম হয় পূর্ব ভারতের প্রথম কাস্টিং কোম্পানি, কাস্টিং ক্যাম্পাসের। বড় পর্দা এবং ছোট পর্দার জন্য শিল্পী নির্বাচন বহু পরিচিত ছিল আরব সাগরের তীরে অর্থাৎ মুম্বাইয়ে। কলকাতায় অভিনেতা অভিনেত্রীরা পরিচিত ছিলেন না কাস্টিং কোম্পানির কার্যকলাপের বিষয়ে। কাস্টিং ক্যাম্পাস নিজের যাত্রা শুরু করার পর অভিনেতা অভিনেত্রীদের পক্ষে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে পৌঁছানো আরো বেশি সোজা হয়ে গিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ কলকাতা শহরে আসেন অভিনেতা বা অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কাস্টিং ক্যাম্পাস লক্ষ্য আর স্বপ্নপূরণের মাঝে সেই সেতুর কাজ করে চলেছে নিয়মিত।
কাস্টিং ক্যাম্পাসের প্রতিষ্ঠাতার নাম কৃষ্ণেন্দু ষান্নিগ্রাহী, যিনি নিজের জীবন শুরু করেছিলেন একজন সহকারী পরিচালক হিসেবে। এর পাশাপাশি ছোট পর্দায় তিনি দীর্ঘদিন শিল্পী নির্বাচনের এবং প্রোগ্রামিং-এর কাজ করেছেন। আকাশ ৮, ইটিভি বাংলা, জি বাংলা, স্টার জলসা এবং কালার্স বাংলার একাধিক ধারাবাহিকে তিনি প্রোগ্রামার এবং শিল্পী নির্বাচক হিসেবে কাজ করেছেন। টেন্ট সিনেমা ও বয়হুড প্রোডাকশনের মতো বড় হাউজের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। সহকারি পরিচালক হিসেবে শুরুটা করেছিলেন বাঙালির প্রথম বড় প্রিয় চ্যানেল দূরদর্শন দিয়ে। বর্তমানে তিনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্ত ছবি “তোর্ষা একটি নদীর নাম।” দেশে এবং বিদেশে একাধিক পুরস্কার পেয়েছে এই ছবি। এই ছবির পরিচালক কাস্টিং ক্যাম্পাসের কর্ণধার কৃষ্ণেন্দু ষান্নিগ্রাহী।
২০১৭তে যাত্রা শুরুর পর থেকেই একের পর এক সাফল্য দেখতে থাকে কাস্টিং ক্যাম্পাস। যে অভিনেতা অভিনেত্রীরা স্বপ্ন দেখে ভরসা রেখেছেন কাস্টিং ক্যাম্পাসের উপর, তারা পরবর্তীকালে গিয়ে ছোট এবং বড় পর্দার পরিচিত মুখ হয়েছেন। সৃজিত মুখার্জির পরবর্তী ছবি “লহ গৌরাঙ্গের নাম রে”, এবং এই ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যাবে অভিনেতা দিব্যজ্যোতি দত্তকে। ২০১৭ সালে “জয়ী” ধারাবাহিকের মাধ্যম দিয়ে নিজের অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন দিব্যজ্যোতি। এছাড়া কালার্স বাংলার “কি করে তোকে বলবো” ধারাবাহিকের মাধ্যমে কাস্টিং ক্যাম্পাস আবিষ্কার করে আরও দুটি নতুন মুখ দ্বৈপায়ন এবং সৌমিকে। বর্তমানে দুজনেই ছোট পর্দার অত্যন্ত পরিচিত মুখ। এই তালিকায় রয়েছেন আরো একাধিক অভিনেতা এবং অভিনেত্রী যারা আজ অত্যন্ত জনপ্রিয়।যেমন স্বাগতা সেন, আহিরি বিশ্বাস, সাক্ষী রায়, সোনালিসা দাস প্রেকসা সাহা সহ আরো অনেকে। প্রতিদিন একাধিক ধারাবাহিক এবং চলচ্চিত্রের জন্য নিয়মিত কাস্টিং হয়ে চলেছে কাস্টিং ক্যাম্পাসের অন্দরমহল থেকে।
কাস্টিং ক্যাম্পাস থেমে থাকে নি কলকাতা শহরের মধ্যে। কলকাতার গন্ডি পেরিয়ে আরব সাগরের তীরে মুম্বাইতেও বহু ছবির জন্য কাস্টিং করেছে কাস্টিং ক্যাম্পাস। লাল সিং চাড্ডাতে দেবদাস ঘোষ, সাবাশ মিঠু ছবিতে মুমতাজ সরকার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ। এর পাশাপাশি বোম্বের বেশ কিছু জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের জন্য কাস্টিং করে চলেছে কাস্টিং ক্যাম্পাস। শাহরুখ খানের সঙ্গে বিজ্ঞাপনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন অভিনেত্রী সরোজ তিওয়ারি এবং এই বিজ্ঞাপনে তাকে কাস্টিং করেছে সকলের ভরসাযোগ্য সংগঠন কাস্টিং ক্যাম্পাস।
কাস্টিং ক্যাম্পাসের একটাই লক্ষ্য, অভিনেতা অভিনেত্রীদের যোগ্য স্থান দেওয়া এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের সেতু হিসেবে কাজ করে যাওয়া।
কাস্টিং-এর পাশাপাশি কাস্টিং ক্যাম্পাসের রয়েছে বেশ কিছু শাখা। ২০১৮ শালে জন্ম নেয় কাস্টিং ক্যাম্পাসের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রোডাকশন হাউস সিনে ক্যাম্পাস যার মাধ্যম দিয়ে বহু পরিচালক ছোট ছবি বানানোর সুযোগ পেয়েছেন। বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী সেই ছবিগুলিতে কাজ করে জনপ্রিয় হয়েছেন এবং জনপ্রিয় মুখেরাও সেই ছবিগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালক হিসেবে কাস্টিং ক্যাম্পাসের কর্ণধার কৃষ্ণেন্দু ষান্নিগ্রাহী বহু প্রশংসিত ছবি পরিচালনা করেছেন সিনে ক্যাম্পাস ইউটিউব চ্যানেলের জন্য। এর পাশাপাশি ২০২৩ শালে জন্ম নেয় কাস্টিং ক্যাম্পাসের অভিনয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাস্টিং ক্যাম্পাস অ্যাক্টিং অ্যাকাডেমি। এই প্রতিষ্ঠানের বহু ছাত্র-ছাত্রী এখন টালিগঞ্জের নিয়মিত কাজ করছেন।
বর্তমানে একজন সফল এবং ব্যস্ত পরিচালক হলেও কাস্টিং থেকে সম্পূর্ণ অবসর কৃষ্ণেন্দু ষান্নিগ্রহী নেন নি। আজও কলকাতা, দক্ষিণ ভারত ও মুম্বাইয়ের বেশ কিছু ছবি এবং বিজ্ঞাপনের জন্য কাস্টিং করে থাকেন তিনি। তবে পরিচালক হিসেবে আজও শিল্পী নির্বাচন করে চলেছেন তিনি। আগামীতে বহু ছবি নিয়ে বড় পর্দায় আসছেন তিনি। সাধারণ মানুষের জীবনের গল্প বলা পরিচালক হিসেবে কৃষ্ণেন্দুর মূল লক্ষ্য, চকচকে জীবনের আড়ালে যে রুক্ষতা বসবাস করে নিজের লেখায় এবং ছবিতে সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি।
কাস্টিং কম্পাস নামক জাহাজের বর্তমান ক্যাপ্টেন কাস্টিং ক্যাম্পাসের পরিশ্রমী বহুদিনের কর্মী অনিরুদ্ধ দে। বর্তমানে কাস্টিং ক্যাম্পাস এর সম্পূর্ণ দায়িত্ব তিনি নিজে হাতে সামলাচ্ছেন,এখন তাকে কাস্টিং ক্যাম্পাসের চালিকা শক্তি বলা যায় তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে চলেছেন তার সহকারী তমঘ্ন মুখার্জি আরো অনেকে। কাস্টিং ক্যাম্পাস কলকাতার বাইরে তাদের যে আউটলেট গুলি খুলতে চলেছে এবং কাস্টিং ক্যাম্পাসের সোশ্যাল মিডিয়া তার পুরো দায়িত্ব সামলাচ্ছেন গৌরব জানা ও বিপাশা কুন্ডু। পাশাকাস্টিং ক্যাম্পাস টিম আজও নিয়মিত কাস্টিং করে চলেছে বহু ছবি, ধারাবাহিক, ওয়েব সিরিজ ও বিজ্ঞাপনের জন্য। এটা নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের স্বপ্ন সফল করার সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য গন্তব্য হিসেবে কাস্টিং ক্যাম্পাস নিজেকে প্রমাণ করেছে দীর্ঘ ৮ বছরের যাত্রায়। নিজের এই নাম অমলিন রাখার চেষ্টা এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নামের পাশে “সাফল্য” নামক শব্দটি জুড়ে দেওয়ার কাজ এই সংগঠন নিয়মিত করে যাবে।