পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্তার ঘটনায় মুখ্যসচিব কে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ ডিভিশন বেঞ্চের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিনরাজ্যে আটকে রেখে হেনস্তার ঘটনায় রাজ্যকে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিল। এদিন এই নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, -‘সচিব পদমর্যাদার নিচে নন—এমন একজন আধিকারিককে অবিলম্বে নিযুক্ত করতে হবে, যিনি ওড়িশা সরকারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সমস্যার দ্রুত সমাধানে উদ্যোগ নেবেন’।এই সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী সোমবার। তার আগে রাজ্যকে আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ।জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওড়িশার একটি শিল্পাঞ্চলে কাজে যাওয়া দুই শ্রমিককে স্থানীয় পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে থাকে । এরপর তাঁদের হেনস্তার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি রাজ্যের আদালতের নজরে এলে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শুনানি শুরু হয়।এই মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘রাজ্যের নাগরিকদের সুরক্ষা ও তাঁদের প্রতি দায়বদ্ধতা সরকারের আছে। যদি কেউ ভিনরাজ্যে হেনস্তার শিকার হন, তবে সরকারকে সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে।’ সেই কারণেই দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনকে।ওই আধিকারিক ওড়িশা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি।গত কয়েকমাস ধরেই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বিভিন্ন রাজ্যে অত্যাচারিত হওয়ার অভিযোগ উঠছে। কখনও মারধর, কখনও তাঁদের উপর হামলা, লুটপাট, উপার্জন কেড়ে নেওয়া, কখনও আবার পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়ার মতো অভিযোগ শোনা গিয়েছে। এনিয়ে অভিযোগ জানালে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন। এসব খবর কানে পৌঁছতেই অবশ্য রাজ্যের তরফে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য গঠিত কমিটির তরফে দায়িত্বপ্রাপ্ত, রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম তড়িঘড়ি তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজ্যে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছেন। বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখছে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যে অমিত শাহকে চিঠি পাঠিয়ে কেন্দ্রের উপর চাপ তৈরি করেন দুই সাংসদ – ইউসুফ পাঠান ও সামিরুল ইসলাম।বীরভূমের প্রতিটি পরিযায়ী শ্রমিককে চিহ্নিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ ডেটা ব্যাঙ্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। জেলার তিনটি মহকুমায় অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। উদ্দেশ্য একটাই, জেলার কোনও পরিযায়ী শ্রমিক যেন রেজিস্ট্রেশন থেকে বাদ না যান। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, যাঁরা এখনও পর্যন্ত সরকারি তালিকায় নেই, তাঁদের খোঁজ করেই নাম অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলছে। সরকারি হিসাবে, বীরভূমে বর্তমানে ১,০১,২৮১ জন পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৫৮ হাজার শ্রমিক রয়েছেন রামপুরহাট মহকুমায়। বোলপুর মহকুমায় ২৯ হাজার এবং সিউড়িতে ১৪ হাজারের মতো পরিযায়ী শ্রমিক কাজের জন্য অন্য রাজ্যে রয়েছেন।