ওবিসি নিয়ে রাজ্যের নুতন বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ 

মোল্লা জসিমউদ্দিন , 

মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওবিসি নিয়ে রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ওবিসি সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানিতে রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার মামলাটি ওঠে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে।১৪০টি জনজাতিকে নিয়ে নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল রাজ্যে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। আদেশনামায় বলা হয়েছে, -‘আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে। আগামী ২৪ জুলাই ওবিসি তালিকা সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে’। রাজ্যের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে জায়গা পেয়েছে ১৪০টি জনজাতি। ওবিসি এ ও বি বিভাগে যথাক্রমে ৪৯টি এবং ৯১টি শ্রেণি রয়েছে। ।  এতেই এবার স্থদিতাদেশ দিয়েছে আদালত। কলকাতা হাইকোর্টের  বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি মান্থার রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বলেন, ”কেন ২০১২ সালের আইনে সংশোধনী আনলেন না? আপনারা ২০১২ সালের ওবিসি আইন অনুযায়ী অর্ধেক কাজ করেছেন। তারপর আবার ১৯৯৩ সালের আইনে ফেরত গেছেন। এটা কেন? বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের ৪-৫টি বিজ্ঞপ্তিতে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে।”অন্যদিকে, রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বক্তব্য, ”আগেও বলা হয়েছিল ওবিসি শ্রেণিভুক্ত ৬৬টি সম্প্রদায়কে নিয়ে পদক্ষেপ করুন। আপনারা বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষা করছেন। তখন বলেছিলাম ঠিক আছে, তাহলে সেই পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করবেন না।” কিন্তু সেই নির্দেশও অমান্য হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্যের উচ্চ আদালত। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের আবেদন মানেননি দুই বিচারপতি। বলা হয়েছে, আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ”বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হল, সার্ভে হয়েছে তখন কেন প্রশ্ন উঠল না? আমরা অ্যাডমিশন করতে পারছি না। যদি আমাদের সিদ্ধান্ত ঠিক প্রমাণিত হয় তখন?” এরই পাল্টা বিচারপতি মান্থার বক্তব্য, ”যে ৪-৫টা নোটিফিকেশন এসেছে এটা তো আদালতের নির্দেশ অবমাননা বোঝায়।” সরকারি চাকরিতে ওবিসিদের জন্য ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করেছিল রাজ্য। যা নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় রাজ্যের সংরক্ষণ নির্দেশ বাতিল করে হাইকোর্ট জানিয়েছিল, ‘ধর্মের ভিত্তিতে কোনও সংরক্ষণ করা যায় না’।গত বছর হাইকোর্টের রায়ে জানানো হয়েছিল, -‘ওবিসি তালিকা পুরোপুরি আইন মেনে তৈরি করা হয়নি। নির্দিষ্ট সমীক্ষা না করেই, নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়াই কারা ওবিসি, তা ঘোষণা করা হয়েছে’। ২০১০ সালের পর থেকে ওবিসি শংসাপত্র প্রাপকদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তা ১৯৯৩ সালের ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস আইনের পরিপন্থী বলেও উল্লেখ করেছিল আদালত। ওবিসি সংরক্ষণ তালিকায় আগে ছিল ৬৬ টা জাতি। নতুন করে সমীক্ষা করে জাতির সংখ্যা কমিয়ে ৬৪টি করা হল এবং নতুন করে আরও ৭৬টি নতুন অনগ্রসর জাতিকে তালিকায় যুক্ত করা হল। অর্থাৎ ওবিসি সংরক্ষণের আওতায় জাতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৪০টি। সেই বিজ্ঞপ্তিতেই অন্তর্বতী স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।হাইকোর্টের এই নির্দেশের ফলে  রাজ্যের কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা যেতে পারে। আটকে যেতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগও। এমনকী, এসএসসির নিয়োগ পরীক্ষাও আটকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।ওবিসি নিয়ে মূল মামলার শুনানি রয়েছে আসন্ন জুলাই মাসে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। 

Leave a Reply