৩৮ বছর বয়সী এক কৃষকের হৃদযন্ত্রে প্রতিস্থাপিত হল সিআরটি-ডি যন্ত্র, প্রাণ বাঁচাল মণিপাল হাসপাতাল, ঢাকুরিয়া
সম্প্রীতি মোল্লা,
বর্ধমান ১৯ জুন, ২০২৫: সময়মতো চিকিৎসা ও আধুনিক প্রযুক্তি বহু ক্ষেত্রে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। কার্ডিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের বহু মফস্বল ও গ্রামীণ অঞ্চলে হৃদরোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ শতাংশ রোগী সঠিক সময়ে চিকিৎসা পান না, ফলে রোগ গুরুতর অবস্থায় পৌঁছে যাওয়ার পরে তাঁদের বড় শহরের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই প্রেক্ষাপটে, মণিপাল হাসপাতাল, ঢাকুরিয়া একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। পূর্ব বর্ধমানের এক ৩৮ বছর বয়সী কৃষক প্রবল বুক ধরা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হন। ডাঃ সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়ের (পরামর্শদাতা, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ) তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয়। ইসিজি-তে ধরা পড়ে যে তিনি একটি মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকে (অ্যান্টেরিয়র ওয়াল মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন) আক্রান্ত হয়েছেন, অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের সামনের দেওয়াল বরাবর বিশাল অংশে রক্তপ্রবাহ বন্ধ।
তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে ক্যাথ ল্যাব নিয়ে যাওয়া হয়। অ্যাঞ্জিওগ্রাম-এ দেখা যায় তাঁর বাম প্রান্তীয় নিম্নমুখী ধমনি (লেফট অ্যান্টেরিয়র ডিসেন্ডিং) সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। সফলভাবে একটি স্টেন্ট বসিয়ে রক্তপ্রবাহ পুনঃস্থাপন করা হয়। তিনদিনের মধ্যেই তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পান। তবে তিন মাস পর ফলো-আপ পরীক্ষায় দেখা যায়, রোগী হালকা কাজ করলেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এবং রাতে শ্বাস বন্ধ হয়ে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে — চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় প্যারক্সিসমাল নকচারনাল ডাইস্পনিয়া (পিএনডি)। ইসিজি-তে আবার দেখা যায়, হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক সংকেত ঠিকমতো কাজ করছে না।
এই পরিস্থিতিতে, ডাঃ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর দল সিদ্ধান্ত নেন হৃদযন্ত্র পুনঃসমন্বয় যন্ত্র সহ বৈদ্যুতিক উত্তেজক যন্ত্র (সিআরটি-ডি) প্রতিস্থাপনের, যা একদিকে হৃদস্পন্দনের সমন্বয় সাধন করে এবং বিপজ্জনক ছন্দ সনাক্ত হলে অবিলম্বে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে রোগীকে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়। অস্ত্রোপচার সফল হয় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রোগীর হৃদযন্ত্রের পাম্প করার ক্ষমতা ৪৫ শতাংশে পৌঁছায়। বর্তমানে তিনি আগের মতোই মাঠে কাজ করছেন, দিব্যি চলাফেরা করছেন।
এই প্রসঙ্গে ডাঃ সুমন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রোগী যখন আমাদের হাসপাতালে আসেন, তখন তাঁর অবস্থার খুবই অবনতি হয়েছিল। চিকিৎসা না হলে শুধু প্রাণ নয়, জীবিকা হারানোর আশঙ্কাও ছিল। আমরা সময়মতো ব্যবস্থা নিয়ে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে তাঁর প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি — এটাই আমাদের সার্থকতা।”
রোগী বলেন, “সেই দিন বুকের ব্যথায় মনে হয়েছিল সব শেষ হয়ে গেছে। একজন কৃষকের কাছে শরীরই সব — জমি, সংসার, ইজ্জত। মণিপাল হাসপাতাল আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে। আজ আমি আবার নিজে হাতে চাষবাস করতে পারছি। এ যেন নতুন করে জন্ম। চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকব ডাক্তারবাবুদের প্রতি।”
মণিপাল হাসপাতালের বৈশিষ্ট্য শুধু অবকাঠামো নয়, দ্রুত ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায়ও নিহিত। ৭৫ জন অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, ১৫ জন কার্ডিয়োথোরাসিক ও ধমনি-শল্যচিকিৎসক, সাতটি আধুনিক ক্যাথেটার পরীক্ষাগার, ২৪ ঘণ্টা আপৎকালীন চিকিৎসা পরিষেবা এবং অভ্যন্তরীণ বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে মণিপাল হাসপাতাল পূর্ব ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর এখানে প্রায় ৩০,০০০ হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত পরীক্ষা ও ৩,০০০-র বেশি হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।