হাইকোর্টে ১০ হাজার টাকার বন্ডে জামিন পেলেন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টকারী শর্মিষ্ঠা, রয়েছে একাধিক শর্ত
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বৃহস্পতিবার গুড়গাঁও থেকে গ্রেফতার হওয়া শর্মিষ্ঠা পানোলির অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন মঞ্জুর হল কলকাতা হাইকোর্টে। এদিন ১০ হাজার টাকার বন্ডে জামিন মঞ্জুর করল রাজ্যের আদালত। এর পাশাপাশি আদালতের তরফে এও বলা হয়েছে যে -‘তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে’।কলকাতা হাইকোর্টের তরফে বলা হয়, ‘আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশ ছাড়তে পারবেন না শর্মিষ্ঠা’। শিক্ষাগত কারণে দেশের বাইরে যেতে হলে নিম্ন আদালতকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে, বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেইসাথে ‘শর্মিষ্ঠাকে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা দিতে হবে’, নির্দেশ আদালতের। হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের কোনও প্রয়োজন নেই, বলে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। ‘যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল সেটা যান্ত্রিকভাবে করা হয়েছিল। সেখানে শুধুমাত্র গ্রেফতার করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল, গ্রেফতার করতেই হবে বলা হয়নি’। ধর্তব্যযোগ্য অপরাধ আছে কিনা? সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার ছিল, জানিয়ে বিচারপতি। নির্দিষ্টভাবে কী মন্তব্য করেছিলেন শর্মিষ্ঠা সেটা অভিযোগপত্রে বলা নেই, । যখন নোটিস দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল তখন শর্মিষ্ঠা কলকাতায় ছিলেন না, এইসব তথ্য উঠে এসেছে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণেউল্লেখ্য, ১৪ মে সোশাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক পোস্ট করেন তিনি। ১৫ মে তাঁর বিরুদ্ধে গার্ডেনরিচ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। এরপরেই মহিলাকে তলব করে তাঁর বাড়িতে একাধিক নোটিস পাঠায় পুলিশ। হাজিরা এড়াতে বেপাত্তা হয়ে যান ধৃত মহিলা। অবশেষে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। এরপর জামিন চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ধৃত শর্মিষ্ঠা পানোলি। সোশাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক পোস্ট করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টার অভিযোগে গুরগাঁও থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে গার্ডেনরিচ থানা। আগেকার শুনানিতে শর্মিষ্ঠা পানোলির আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতির মন্তব্য ছিল, ‘আমাদের বাকস্বাধীনতা আছে। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আমরা যা ইচ্ছা বলতে পারি। আমাদের দেশ বৈচিত্র্যে পূর্ণ। আপনার এই বক্তব্যের কারণে আমাদের দেশের নাগরিকদের একাংশের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। যার ফলে এই চারটি এফআইআর দায়ের হয়েছে।’যেভাবে শর্মিষ্ঠাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ও আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মন্তব্য বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চের।শর্মিষ্ঠাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়েছে, তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।কেস ডায়েরি থেকে কলকাতা পুলিশকে এফআইআর দেখানোর নির্দেশ। মামলাটি গ্রীষ্মকালীন বেঞ্চের পরিবর্তে নিয়মিত বেঞ্চে পাঠানোর অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে তখনই এফআইআর দেখানোর নির্দেশ। ‘অভিযুক্তকে নোটিস দেওয়ার সময় বাড়িতে না পাওয়া যাওয়ায় পুলিশ এফআইআর অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে। এক্ষেত্রে যাবতীয় আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। যখন তাকে পাওয়া যায়নি, তখন পরোয়ানা জারিও করা হয়’। জানায় পুলিশ।পরোয়ানা জারি করার সূত্রেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জানান, গ্রেফতারির কারণটা জানান। শুধু ওয়ারেন্ট জারির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার? সেটাই কি যথেষ্ট?আদালতের এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখ করা হয়। তার উত্তরে বিচারপতি বলেন, ঠিক আছে দেখছি। বিচারপতি আরও বলেন, -‘এই মুহূর্তে ডায়েরির বিষয়বস্তু শর্মিষ্ঠার জানার দরকার নেই। কিন্তু গ্রেফতারের কারণ জানাটা তাঁর দরকার এবং এই আদালতে রাজ্যকে তার প্রমাণ দিতে হবে’।শর্মিষ্ঠার আইনজীবীর সওয়াল, -‘শর্মিষ্ঠার গ্রেফতারি সম্পূর্ণ বেআইনি। একদিন পরেই এই ভিডিওটি মুছে দেওয়া হয়। ভিডিওর মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের প্রতি। সেখানে অসতর্ক কিছু শব্দ প্রয়োগ হয়েছে। অথচ তার জেরে অভিযুক্তকে লাগাতার হুমকি শুনতে হয়েছে ও হচ্ছে। তার ব্যক্তিগত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ্যে আনা হয়েছে’।