‘ইন্ডিয়া জাস্টিসে’র রিপোর্টে দেশের ১৭ নং অবস্থানে কলকাতা হাইকোর্ট!  

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

‘রাজনৈতিক মামলা এবং হেভিওয়েট ব্যক্তিদের দাখিল মামলার বেড়াজালে আটকে যায় সিংহভাগ  সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার’।কলকাতা হাইকোর্টে এই অভিযোগ প্রায় শোনা যায় ভুক্তভোগী মামলাকারীদের কাছ থেকে। বিরোধী দলনেতার কর্মসূচীতে অনুমতির আবেদন  থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন সংক্রান্ত মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে যেন থাকে কলকাতা হাইকোর্ট!  রাজ্যের উচ্চ আদালতে জমে রয়েছে ২ লক্ষের কাছাকাছি মামলা। সাধারণ ব্যক্তিদের এমনও মামলা আছে,যার ‘প্রথম’ শুনানি হতে বছর পার হয়ে গেছে। অথচ রাজনৈতিক নেতাদের মামলা গুলি দাখিলের পরের দিনই দীর্ঘক্ষণ শুনানি চলে। নিস্পত্তি হয়ও দ্রুত। এহেন পেক্ষাপটে সম্প্রতি টাটা ট্রাস্টের উদ্যোগে তৈরি ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট ২০২৫’ প্রকাশ পেয়েছে। সেই সমীক্ষাতেই উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টকে বিচারদানে সর্বশেষ সারিতে  জায়গা দেওয়া হয়েছে।শুধু বিচার ব্যবস্থার নিরিখেই নয়, পুলিশ, জেল, আইনি সহায়তা ও বিচার ব্যবস্থা- এই চারটি ক্ষেত্রের নিরিখে দেশে সব রাজ্যের শেষে ঠাঁই পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। প্রথম পাঁচে জায়গা পেয়েছে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি। চারটি মাপকাঠিতে দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কর্নাটক।টাটা ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে শুরু হয় ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট’ নামে এই সমীক্ষা। শুরু থেকেই পুলিশ, জেল, বিচার বিভাগ এবং আইনি সহায়তার দিকগুলি বিচার করে রিপোর্ট তৈরি করা হয়।২০২৫ সালের যে রিপোর্ট সামনে এসেছে, তাতে সবকটি বিষয়ে ভাল ‘মার্কস’ পেয়ে প্রথম পাঁচে জায়গা পেয়েছে কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গনা, কেরল এবং তামিলনাড়ু। কর্নাটকের স্কোর যেখানে ৬.৭৮, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্তি মাত্র ৩.৬৩। পশ্চিবঙ্গের ঠিক উপরে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড।’ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট’ অনুসারে, ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বিচার বিভাগে সবথেকে বেশি উন্নতি করেছে রাজস্থান, কেরল এবং মধ্যপ্রদেশ। জেল পরিচালনার মাপকাঠিতে ওড়িশা এবং ঝাড়খণ্ড ভাল কাজ করেছে।সার্বিকভাবে রাজ্যে লিগাল এড সার্ভিস থাকলেও সাধারণ মানুষ তা থেকে কতটা উপকৃত হচ্ছে?  সেটা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে। এ রাজ্যে হাইকোর্টের শূন্যপদে নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। আইনজীবীদের একাংশ  বলেন, “ আদালত কর্মীদের নিয়ে মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। রাজ্যের দায়িত্ব এই শূন্যপদ পূরণ করা। হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশন  থেকে নিয়োগ হচ্ছে না, সেটা করাতে হবে, বাইরে থেকে কোনও বিচারপতি এলে, কোর্টের কাজ বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়’।  সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সহ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদনে দ্রুত শুন্যপদে বিচারপতি নিয়োগের দাবি রেখেছেন। ২০২২ সালের পর কলকাতা হাইকোর্টে নুতন করে বিচারপতি নিয়োগ সেভাবে হয়নি।২০১৪ সালের নিরিখে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সংখ্যা ৭২।বর্তমান সময়ের সাথে জনসংখ্যার হিসাব করলে আরও বিচারপতি সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বিচারপতির শূন্য পদ থাকায় মামলার শুনানি করা যাচ্ছে না। রয়েছে মামলার দীর্ঘসূত্রিতাও। এরফলে সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে।শুধু কলকাতা হাইকোর্টেই ৭২টি বিচারপতি পদ থাকলেও, বিচারপতি আছেন মাত্র ৪৩ জন। ২৯ জন বিচারপতির পদ শুন্য।৪০% শূন্যপথ রেখেই বিচারদানে কচ্ছপের গতিতে যেন এগুচ্ছে কলকাতা হাইকোর্ট।  এরফলে মামলা জমে থাকছে। শুধু হাইকোর্টেই ২ লক্ষের বেশি মামলা জমে আছে। দেওয়ানি মামলা প্রায় ১ লক্ষ ৫৫ হাজার,ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ২৮ হাজারের বেশি, অরিজিনাল সাইডের মামলা ১৭ হাজার মত ।সময়ের গতিতে কলকাতা হাইকোর্টে বেড়েছে পাহাড় সমান মামলা।  ঠিক এইরকম জায়গায় হাইপ্রোফাইল মামলার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছেন সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা।তারিখের পর তারিখ মিলছে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপ্রার্থীদের বলে অভিযোগ। গত ১৮৬২ সালে স্থাপিত হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বর্তমান হিসাবে কলকাতা হাইকোর্টে সর্বমোট বিচারপতি থাকার কথা ৭২ জন।এঁদের মধ্যে ৫৪ জন স্থায়ী এবং ১৮ জন অস্থায়ী। সেইজায়গায় কলকাতা হাইকোর্টে রয়েছেন ৪৩ জন বিচারপতি। দেখা যাচ্ছে এখনও ২৯ জন বিচারপতি পদ খালি রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।যা শতাংশ বিচারে  চল্লিশের  এর মত। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম কমিটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হাইকোর্ট গুলির বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ দেয়।যা কেন্দ্র সরকার মেনে নেয়।তবে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকার কলেজিয়াম কমিটির সুপারিশ কেন কার্যকর করছেনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।। ‘বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলে’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান  জনাব আনসার মন্ডল জানিয়েছেন – ” আমরা চাই কলকাতা হাইকোর্টে দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ হোক। সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত বিচার পাবেন এতে”। যদিও কলকাতা হাইকোর্টের মিডিয়েশন কমিটি সম্প্রতি ১২৫ জন মিডিয়েটর কে তালিকাভুক্ত করেছে মামলার পাহাড় কে কিছুটা কমাতে।

Leave a Reply