বসন্ত-উৎসব উদযাপনে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি
মোল্লা জসিমউদ্দিন ,
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবর্তিত বাংলার ঋতুবন্দনা উৎসবগুলির মধ্যে বসন্ত-বন্দনা উৎসব অন্যতম। সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি প্রতিবছরের মতো এবারেও বসন্তোৎসবের আয়োজন করল রবিবার বিকালে ঠাকুরবাড়ি অঙ্গনে। প্রথম পর্যায়ে সমবেতভাবে সঙ্গীত-নৃত্যযোগে ঠাকুরবাড়ি প্রদক্ষিণের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। প্রাঙ্গন পরিক্রমায় পুরোভাগে ছিলেন আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথি হিউগ্ বয়লান, কনসাল জেনারেল, কলকাতাস্থিত অস্ট্রেলিয়া দূতাবাস, কিউন ইয়ং, ডেপুটি কনসাল জেনারেল, কলকাতাস্থিত চীনা দূতাবাস, রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির কর্মপরিচালন সমিতির কর্তাব্যক্তিগণ। উৎসবে আমন্ত্রিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিল্পী-কলাকুশলী, সোসাইটির সদস্য-সদস্যাগণ সকলে একত্রিত হয়ে সুশৃঙ্খল সারিবদ্ধভাবে পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। যাত্রাপথের বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গনে ফুল ছড়িয়ে ফাগ উড়িয়ে গানের তালে তালে নৃত্য প্রদর্শনে সমবেত মানুষের পদসঞ্চারে অপূর্ব পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সোসাইটির তরফে সংগীত পরিচালনা ও অংশগ্রহণে ছিলেন শিপ্রা বসু, সুপ্রিয়া চক্রবর্তী, ললিতা সিনহা, সৌমি মুখার্জী, দিলীপ সেন, বিশ্বনাথ দাস প্রমুখ। রথীন্দ্রমঞ্চের কাছে এসে ঠাকুরবাড়ি পরিক্রমা শেষ হয়। এরপর রথীন্দ্রমঞ্চে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানপর্ব। আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়া কনসাল জেনারেল হিউগ্ বয়লান, চীনা ডেপুটি কনসাল জেনারেল কিউন ইয়ং। সোসাইটির পক্ষে মঞ্চে ছিলেন সহ সভাপতি অনিন্দ্য কুমার মিত্র, সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, গৌরাঙ্গ মিত্র , কোষাধ্যক্ষ, সহ সম্পাদক রঞ্জিত কুমার নায়ক ও কর্মপরিচালন সমিতির সদস্য ধীমান দাশ। মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ সহ সোসাইটির কর্মকর্তাগণ। সোসাইটির তরফে পুষ্পস্তবক, স্মারক ইত্যাদি দিয়ে একে একে বরণ করে নেওয়া হয় বিশিষ্ট অতিথিদের। সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের স্বাগত ভাষণের পর বক্তব্য রাখেন হিউগ্ বয়লান, কিউন ইয়ং, সোসাইটির সহ সভাপতি অনিন্দ্য কুমার মিত্র মহাশয়। অস্ট্রেলিয়া কনসাল জেনারেল এবং চীনা ডেপুটি কনসাল জেনারেল তাঁদের বক্তব্যে এইরকম একটি অনিন্দ্যসুন্দর আয়োজন প্রত্যক্ষ করে নিজেদের আনন্দ অনুভূতির কথা উল্লেখ করেন ও সোসাইটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এর পর বসন্তোৎসব কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং একে একে মঞ্চ পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন আমন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলির শিল্পী-সদস্যরা। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সোস্যাল ওয়েলফেয়ার এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘হোরিখেলা’ কবিতার সাথে গান সহ নৃত্য প্রদর্শন। অ্যাডামাস ইউনিভার্সিটি থেকে আগত শিল্পীরা সংগীত নৃত্যযোগে পরিবেশন করেন “রবীন্দ্রচেতনায় প্রেম ও বিরহ”। রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির শিল্পীদের উপস্থাপনায় ছিল “নবীন প্রাণের বসন্ত” শীর্ষক নৃত্যালেখ্য সংগীত সহযোগে। টেকনো ইন্ডিয়া মেন সল্টলেক, হিন্দু স্কুল কলকাতা, পাঠ ভবন, সালকিয়া হিন্দু স্কুল এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে তাদের শিল্পীকলাকুশলীরা কবিতা সংগীত ও নৃত্য সমন্বয়ে এক একটি অনুপম উপস্থাপনা তুলে ধরেন মঞ্চে। পরিবেশনার গুণে প্রতিটি উপস্থাপনা হয়ে দাঁড়ায় দৃষ্টিনন্দন শ্রুতিমধুর মনোমুগ্ধকর। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সোসাইটির তরফ থেকে পুষ্পস্তবক ও শংসাপত্র দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হয়। শেষলগ্নে সমবেত কণ্ঠে ভারতের জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। রথীন্দ্রমঞ্চে সার্বিক অনুষ্ঠানপর্ব সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন ইরা সর্বজ্ঞ ও দেবাশিস সেনগুপ্ত।