খায়রুল আনাম,

অতীতে যা অপ্রত্যাশিত ছিল, বর্তমান সময়ে তাই-ই ঘটে চলেছে একদা টানা ৩৪ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্টের ব’ কলমে ক্ষমতায় থাকা এরাজ্যের সিপিআই (এর)-ক্ষেত্রে। ক্ষমতায় থাকাকানীন সময়ে সিপিএমের একছত্র আধিপত্তের দাপটে শরীক দলগুলিকে একঅর্থে গুটিয়ে থাকতে হতো। তাই এখন দেখা যায়, সিপিএমকে এখন আর শরীকদলগুলি সেইঅর্থে তেমন একটা গুরুত্বও দেয় না। দিল্লীর পলিটব্যুরো নামক দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এক সময় জ্যোতি বসু থেকে শুরু করে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতাকেও নানাভাবে অপদস্ত করার যে খেলা চালিয়েছে, তারই ফলশ্রুতিতে এরাজ্যে সিপিএম এখন বল থেকে বিন্দুতে এসে ঠেকেছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে অসহায় অবস্থায় দলের সামনের সারিতে যে দু’চারটি তরুণ মুখ নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের কারও-ই জনভিত্তি নেই। লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে ‘বোকাবাক্সে’ জেল্লা দেওয়া পোশাক আর কথাবার্তায় ক্ষমতায় আসার অসাড় স্বপ্নফেরি করার কথা বললেও, তা আর প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। এমনই অবস্থা হয়েছে যে, দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের তীর্যক শ্লেষাত্মক কথাবার্তাকে অনেকেই যেমন গুরুত্ব দেন না তেমনি, ভোট ময়দানে ফেরিওয়ালার মতো ঘুরেও তিনি জয়ী হতে পারেন না। কে যে তাদের ‘রাজনৈতিক শত্রু’ তাও নির্দিষ্ট করতে পারছেন না। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দলের বিভিন্ন জেলার জেলা সম্মেলনগুলিতে। দলের ২৭তম রাজ্য সম্মেলন ২২ ফেব্রুয়ারী শুরু হচ্ছে হুগলীর ডানকুনিতে। চারদিনের এই সম্মেলন শেষে ২৭ ফেব্রুয়ারী হবে প্রকাশ্য সমাবেশ। তার আগে দলের জেলা কমিটি গড়তে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে দল। অভাবনীয়ভাবে দেখা দিচ্ছে দলের ভিতরে গোষ্ঠী কোন্দল। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই কোন্দল প্রকট হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন দলের ১৭ জন নেতা। যা ‘অভাবনীয়’ বলে চিহ্নিত হচ্ছে। মহম্মদ সেলিম তার পছন্দের মৃণাল চক্রবর্তীকে পুনরায় উত্তর ২৪ পরগণার জেলা সম্পাদক পদে বসাতে গিয়ে ভোটাভুটিতে গোহারান হেরেছেন। এটাকে দলের অনেকেই অশনি সংকেত এবং মহম্মদ সেলিমের প্রতি ‘আস্থাহীনতা’ হিসেবে দেখছেন। আর তারই মধ্যে দলের উচ্চপদে না থেকেও দলের প্রবীণ নেতা বিমান বসু সমাজ মাধ্যমকে ব্যবহার করে মন্তব্য করেছেন যে, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-র ২৭ তম ডানকুনি সম্মেলন পার্টির ননিয়মনীতি মান্য করে গঠনমূলক আলোচনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেজেলায় জেলায় পার্টির শক্তিকে সংহত করে প্রসারিত করবে আশা করছি। অর্থাৎ , তিনি আশা করছেন। দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। এটাই কিন্ত ভিতর থেকে ভেঙ্গে যাওয়াকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত করছে। তাই নয় কী?

Leave a Reply