২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় হাইকোর্টের রায় কে সমর্থন সিবিআইয়ের 

“আসল তথ্য জানা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে” সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

সোমবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে উঠে চাকরি বাতিল মামলা। ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলার  শুনানি শেষ সুপ্রিম কোর্টে । এদিন এই মামলার শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলল শুনানি। মামলাকারী বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য শোনেন প্রধান বিচারপতি।চাকরি বাতিল মামলার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই শীর্ষ আদালতে জানিয়েছে, -‘২০১৬ সালে সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের রায়ই বহাল থাকুক’। এসএসসি জানাল, ‘র‌্যাঙ্ক জাম্প’ এবং প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য থাকলেও ওএমআর শিট কারচুপির তথ্য তাদের কাছে নেই’। রাজ্য সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, -‘এত জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে’। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানাল, -‘এই মামলায় আসল তথ্য জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে’। শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছে আদালত।একাধিকবার সুপ্রিম কোর্টে এসএসসি ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মামলা পিছিয়ে যায়। গত ২৮ জানুয়ারি শীর্ষ আদালতে এই মামলার শুনানি ছিল। ওইদিন যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করার ক্ষেত্রে সমস্যা কথা শুনানিতে ওঠে। কত জন যোগ্য এবং অযোগ্যকে বাছাই করা হয়েছে, তা নিয়েও এসএসসিকে প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। ওইদিন শুনানি আবেদকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, -‘অনেকে চাকরির আবেদন না করেও নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে’। পুরো প্যানেল বাতিল করে নতুন করে নিয়োগের কথা বলেছিলেন। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বলে প্রধান বিচারপতির এজলাসে জানান বিকাশরঞ্জন। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি খন্না নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে কি না? সে বিষয়ে গত শুনানিতে জানতে চেয়েছিলেন। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কতটা কঠিন? তা-ও জানতে চান তিনি। সোমবার এই মামলার  শুনানিতে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এসএসসির কাছে জানতে চায় যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব কি না? এসএসসি আইনজীবী জানায়, -‘ ‘র‌্যাঙ্ক জাম্প’ এবং প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগের তথ্য থাকলেও ওএমআর শিট কারচুপির তথ্য তাদের কাছে নেই’।প্রধান বিচারপতির এজলাসে  কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই জানায়, -‘এসএসসির  নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে’। ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায়কেই সমর্থন করছে তারা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আরও জানায়, -‘ডেটা স্ক্যান টেক ও পঙ্কজ বনসলের কাছ থেকে যা তথ্য পেয়েছে, তা মিলিয়ে দেখা হয়েছে, দুইয়েরই হ্যাশ ভ্যালু এক’। প্রধান বিচারপতি জানান, -‘সমস্যা হল আসল ওএমআর শিট নেই’। সে ক্ষেত্রে কোন ওএমআর শিটকে আসল বলে ধরে নেওয়া হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চেরও মত, -‘পঙ্কজ বনসলের কাছ থেকে পাওয়া ডেটা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। আসল তথ্য জানা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে’।সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত রায়দান স্থগিত রেখেছে। উল্লেখ্য, কলকাতা  হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করেছিলেন। তার ফলে চাকরি চলে যায় ২৬ হাজার। যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ওই চাকরিপ্রাপকদের চার সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ হারে সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে বলা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। আলাদা ভাবে মামলা করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর, এসএসসি এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন চাকরিহারাদের কয়েক জনও। একাধিকবার শুনানি পিছিয়ে গিয়েছে। হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর ভবিষ্যৎ ঝুলে রয়েছে। সেই নিয়োগ নিয়ে জটিলতা রয়েই গেল।গত ২৭ জানুয়ারি শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দিয়েছিলেন, -‘এই মামলায় ১০ ফেব্রুয়ারিই শেষ শুনানি’। যোগ্য ও অযোগ্যদের পৃথক করা সম্ভব না হলে পুরো প্যানেল বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।এদিন এক আইনজীবী  বলেন, “এসএসসি বারবার বলেছে তারা যোগ্য-অযোগ্য পৃথকীকরণ করতে পারছে না। এসএসসি, বোর্ড, রাজ্য সরকার কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। যোগ্য ও অযোগ্যের সংখ্যা কত, তা বলতে পারেনি।” তিনি সওয়াল করেন, “পুরনো প্যানেল বাতিল করে ফের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া উচিত।”অন্যদিকে, সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, “নায়সা আমাদের জানায় যে কোনও ডেটা নেই। তারপর আমরা ডেটা স্ক‍্যানটেক থেকে ডেটা সংগ্রহ করি। এরপর আমরা পঙ্কজ বনশলের (নায়সার প্রাক্তন কর্তা) কাছ থেকে ডেটা সংগ্রহ করি। দুটো ডেটাকে মিলিয়ে দেখি।”সিবিআইয়ের আইনজীবী দাবি করেন, “ডেটা স্ক্যানটেক থেকে পাওয়া তথ্য ও পঙ্কজ বনশলের তথ্য মিলেছে। পঙ্কজ বনশলের কাছ থেকে পাওয়া ডেটা নির্ভুল।” সিবিআইয়ের আইনজীবী আরও বলেন, “এসএসসির কাছে যে ডেটা ছিল, তাতে কারসাজি হয়েছিল। আমাদের তদন্তে স্পষ্ট, পঙ্কজ বনশলের কাছে যে ডেটা রয়েছে, তাতে কারসাজি হয়নি।”যে প্রার্থীরা নির্বাচিত  হননি, তাঁদের পক্ষের আইনজীবী   বলেন, “চাকরিপ্রার্থীরা কত নম্বর পেয়েছেন, সেই সংক্রান্ত মেরিট লিস্ট কখনও প্রকাশ করা হয়নি। কলকাতা হাইকোর্ট এই মেরিট লিস্ট প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তা মানা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, লিখিত পরীক্ষার পর মেরিট লিস্ট প্রকাশ করতে হয়। কারা ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পেলেন, তাঁদের তালিকা প্রকাশ করতে হয়। মোট শূন্য পদের চার গুণ বেশি প্রার্থীদের নিয়ে প্যানেল তৈরি করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে একাধিক অনিয়ম হয়েছে। পঙ্কজ বনশলের ডেটার ভিত্তিতে নতুন মেধাতালিকা তৈরি হোক। সাদা ওএমআর যাঁদের, তাঁদের প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হোক।” এরপর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তখন বলেন, “সিবিআই বলছে, বনশলের ডেটা প্রকৃত সত্য। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না এটাই প্রকৃত ডেটা। কারণ আমাদের হাতে অরিজিনাল মার্কসিট নেই। আমরা পঙ্কজ বনশলের ডেটাকেও সন্দেহ করছি।” এখন কবে রায়দান হবে?  তা নিয়ে তাকিয়ে গোটা বাংলা। 

Leave a Reply