খায়রুল আনাম,
বীরভূম : এবারের সরস্বতী পুজোতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে যে শান্তিনিকেতনের পথচলা শুরু, তা পরবর্তী সময়ে পূর্ণতা পেয়েছে মহর্ষিপুত্র রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যার অঙ্গন বিশ্বভারতী। ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেছিলেন এখানকার ছাতিমতলায়। এখানেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর ‘প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি। এখানে কোনও মূর্তি পুজোর প্রচলন নেই। নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা ব্যতিত কোনও সম্প্রদায় বিশেষের অভীষ্ট দেবদেবী, প্রাণী, মূর্তি চিত্র এখানে পূজিত হয় না। কোনও চিহ্নের পুজো বা যজ্ঞ এখানে হয় না। এখানকার ছাতিমতলায় ও উপাসনা গৃহে নিরাকার এক ঈশ্বরবাদের তত্ত্ব অনুসরণ করে প্রার্থনা করা হয় মাত্র। কিন্তু এবার সরস্বতী পুজোয় এখানকার বিশ্বভারতীর শান্তিশ্রী বয়েজ হোস্টেলে কী ভাবে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে সরস্বতী পুজো হলো, তা নিয়ে যেমন শোরগোল পড়ে গিয়েছে তেমনি, আশ্রমিকদের পক্ষ থেকে এর নিন্দা প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। শুধুমাত্র শান্তিশ্রী বয়েজ হস্টেলে যে মূর্তিপুজো হয়েছে তাই-ই নয়, নিয়ম লঙ্ঘন করে বয়েজ হস্টেলের ওই পুজোয় ছাত্রীদেরও দেখা গিয়েছে। আর এনিয়েই শান্তিনিকেতন জুড়ে গেল গেল রব। শুধুমাত্র শান্তিনিকেতনে বাড়ি করে বসবাস করার সুবাদে বারমুডা পরে ছাতিমতলা আর উপাসনা গৃহ প্রাঙ্গনে যাওয়া এঁদোমেদোরাও এখন এখানে রবীন্দ্র আদর্শধারী প্রবীণ আশ্রমিক হয়ে বিবৃতিবিলাসী বুদ্ধিজীবী সেজে টলমল পায়ে রবীন্দ্র আদর্শের ফেরিওয়ালা সেজে বিবৃতি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন, বিশ্বভারতীর বয়েজ ও গার্লস হস্টেলগুলিতে বেতনভূক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ও হস্টেল ওয়ার্ডেনরা রয়েছেন। এমন কী, প্রতিটি হস্টেলে থাকা একজন ছাত্র বা ছাত্রীও এর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করে সরস্বতী পুজোর আয়োজন নিশ্চয়ই তাদের অগোচরে হতে পারে না। এমন কী, বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা বিভাগের অগোচরেও এটা হতে পারে না। আর তা যদি হয় তাহলে বুঝতে হবে যে, বিশ্বভারতীর রীতি ও আদর্শ বিচ্যুতির জন্য এরা সকলেই সমানভাবে দায়ি। তাই এবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, সমগ্র বিষয়টিই খতিয়ে দেখার।