থ্রেট কালচারের বলি ঝাড়গ্রামের চিকিৎসক দীপ্র ভট্টাচার্য? রাজ্যের রিপোর্ট চাইলো হাইকোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে উঠে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক দীপ্র ভট্টাচার্যের আত্মহত্যা বিষয়ক মামলা। এই ঘটনায় রাজ্যের রিপোর্ট তলব করলো আদালত । বন্ধ খামে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে রিপোর্ট দেবে রাজ্য।ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক দীপ্র ভট্টাচার্যের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারের রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় যখন আন্দোলন চলছে, সেই সময়ে গতবছর ৭ নভেম্বর ঝাড়গ্রামের রঘুনাথপুরে একটি লজের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ওই চিকিৎসকের দেহ।তার পাশ একটি সিরিঞ্জও পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশ জানতে পারে, মৃত্যুর আগে স্ত্রীকে মেসেজও পাঠিয়েছিলেন দীপ্র। সেই ঘটনায় ‘থ্রেট কালচার’ অভিযোগ তুলেছিলেন অনেকে। যা নিয়ে পরবর্তীকালে হাইকোর্টে মামলা হয়। বৃহস্পতিবার সেই মামলারই শুনানি ছিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে।প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, -‘রাজ্যকে এ বিষয়ে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিতে হবে’।দীপ্রের দেহ উদ্ধারের পর থেকেই পুলিশ দাবি করছিল, এই ঘটনার সঙ্গে খুনের যোগ নেই বলে মনে হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, সিরিঞ্জের মাধ্যমে নিজের শরীরে নিজেই ওষুধ প্রয়োগ করে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই চিকিৎসক। তাঁর দেহে প্রতিরোধের কোনও চিহ্নও পাওয়া যায়নি। এদিন রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়, -‘সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরে এই আত্মহত্যা বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। মৃতের বাবাও কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি।এর ফলে ‘থ্রেট কালচার’-এর সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই বলেই মনে করা হচ্ছে’। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, -‘এই সংক্রান্ত ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে। তা দেখে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে’। আপাতত দু’সপ্তাহের জন্য মামলাটি স্থগিত রেখেছে রাজ্যের উচ্চ আদালত।ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনায় ‘থ্রেট কালচার’ বন্ধ করতে চেয়ে হাইকোর্টে মামলাটি করেছিলেন এক ব্যক্তি । মামলাকারীর আইনজীবীকে আদালত ভর্ৎসনা করেছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের পর্যবেক্ষণ, -‘মৃতের পরিবারের তরফে কেউ মামলা করেননি। তাঁরা কেউ আদালতের দ্বারস্থ হননি’। মৃতের পরিবারের গোপনীয়তার বিষয়টি তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা জানিয়েছে আদালত। পরিবারের তাগিদ না থাকলেও কেন এই মামলা করা হয়েছে, তা নিয়ে বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এদিন হাইকোর্ট জানায় -‘ আমরা নর্থ বেঙ্গল লবি নিয়ে একটি মামলা শুনেছি। থ্রেট কালচার সেখানেও ছিল। রাজ্য তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানাবে আদালতকে।’এরপরই প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের পরামর্শ, -‘এই মামলায় চিকিৎসকের স্ত্রীকে যুক্ত করা উচিৎ। তাঁর কিছু বলার থাকতে পারে। তবে তাঁর পরিচয় গোপন রাখতে হবে।আমরা সিলড কভারে রিপোর্ট দেখব। ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির রিপোর্ট দেখে পরের সিদ্ধান্ত নেব।” মামলার পরবর্তী শুনানি দু’সপ্তাহ পর। প্রসঙ্গত, গত বছরের নভেম্বর ঝাড়গ্রামের একটি লজের ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছিল চিকিৎসকের দেহ। ছুটি কাটিয়ে ফিরেছিলেন লজে। তারপর আর পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে উদ্ধার হয় দেহ।যা নিয়ে এই মামলা।