হাতে তুলে দেওয়া হলো মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা
জাতিগত শংসাপত্র পেলেন আটাত্তরজন আদিবাসী
খায়রুল আনাম
আধুনিক যাপিত-জীবন ওঁদের কাছে অধরা। নিত্যদিনের অন্নসংস্থানের জন্য ওঁদের লড়াইটাও নিত্যদিনেরই। আর তাতেই ক্ষয়ে যায় শরীর এবং এক সময় তা নিঃশেষিত হয়ে যায় নিঃশব্দে। ওঁরা জানেনই না, ওঁদের জন্য রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড এবং লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা। আবার সরকারিভাবে যখন ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির হয় তখনও ওঁরা অনুপস্থিত থেকে যান ক্ষুন্নিবৃত্তির তাগিদে ভোরের আলো ফোটার আগেই এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয় বলে। এমনই একটি আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম বীরভূমের রামপুরহাটের কড়কড়িয়া।
আদিবাসী অধ্যুষিত এই কড়কড়িয়া গ্রামের বিষয়ে অবহিত হওয়ার পরই রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চস্তর নবান্ন থেকে রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনের কাছে এখানকার আদিবাসীরা যাতে সরকারি সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ এসে পৌঁছয়। তারপরই প্রশাসনিকস্তরে কড়কড়িয়া গ্রামে সমস্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হয়। এমন কী, এখানকার আদিবাসী মানুষজন দিনের বেলায় ক্ষুন্নিবৃত্তির তাগিদে বাইরে চলে যাওয়ায় সেখানে নৈশকালীন ভ্রাম্যমান শিবিরও করা হয় মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তখনই দেখা যায়, আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজনদের সরকারি সুবিধা দিতে গেলে যে জাতিগত শংসাপত্রের প্রয়োজন হয় তাই-ই এঁদের নেই। এমন কী নেই আধার কার্ডও। এবং তারপরই এখানে টানা চারদিন ধরে ভ্রাম্যমান শিবির করে প্রশাসনিক আধিকারিকরা তাঁদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরী করে দেন। এখানকার বাসিন্দারা জানান, তাঁদের পূর্ব পুরুষদেরও জাতিগত শংসাপত্র ছিলো না। তাই তাঁরা এসব বিষয়ে কিছুই জানতেনও না। জীবিকার তাগিদে তাঁরা ভোরের আলো ফোটার আগেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় কোথায় কী শিবির হচ্ছে তারও খবর পেতেন না। সেইসব দিকে দৃষ্টি দিয়েই শনিবার ২০ জানুয়ারি কড়কড়িয়া গ্রামের শ্রমজীবী আদিবাসী পরিবারগুলি সময় মতোই তাঁদের দুয়ারে সরকারি আধিকারিকরা পৌঁছে গেলেন দুয়ারে সরকারের সমস্ত ধরনের পরিষেবার ছাড়পত্র হাতে নিয়ে। সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে সরকারি পরিষেবা প্রদান এই কর্মসূচিতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রামপুরহাটের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এদিন ভ্রাম্যমান শিবিরে যে আটাত্তরজনের তথ্যাবলি সংগ্রহ করা হয়েছিলো তাঁদের সবার হাতেই জাতিগত শংসাপত্র ও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডন তুলে দেন ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও রামপুরহাট-২ বিডিও অর্ঘ্য দত্ত। সেই সাথে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাপত্র। যা হাতে পেয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন আদিবাসী পরিবারের মানুষজনেরা। তাঁরা বিস্মিত হয়ে বলেন, তাঁদের জন্য যে সরকারি এতো পরিষেবার সুবিধা আছে তা তাঁরা আগে জানতেন না। প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানান, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ সরকারি সমস্ত ধরনের পরিষেবা পেতে এঁদের আর কোনও সমস্যা হবে না। এখন থেকে এইসব পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনা করার ক্ষেত্রেও সরকারি সমস্ত ধরনের সুবিধা পাবেন। জাতিগত শংসাপত্র হাতে আসায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও আর সমস্যায় পড়তে হবে না ।।
ছবি : আদিবাসীদের হাতে দেওয়া হচ্ছে শংসাপত্র।