রামমন্দিরে ভগবানেরও স্বাধীনতা নেই বলে মন্তব্য
সংখ্যালঘু ভোট ধরে রাখতে উদ্যোগী হতে হবে সাংসদ শতাব্দীকে
খায়রুল আনাম
আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি যেমন নেওয়া হয়েছে তেমনি ইংরেজি নববর্ষ থেকে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস পক্ষকালব্যাপী জনসংযোগ গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিক কর্মসূচিও হাতে নিয়ে লাগাতার প্রচারাভিযান চালিয়েছে। আর এক্ষেত্রে জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্র বোলপুর ও বীরভূম লোকসভা আসন দু’টিই শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে রয়েছে। এরমধ্যে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ অসিত মাল আদৌ দলীয় মনোনয়ন পাবেন কী না, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও স্পষ্ট বার্তা পাওয়া না যাওয়ায়, তাঁকে নিয়ে দলীয়স্তরে কোনও প্রচারও দেখা যাচ্ছে না। অপরদিকে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তিনবারের তারকা সাংসদ শতাব্দী রায় যে চতুর্থবারের জন্য দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা নিয়ে এক অর্থে নিশ্চয়তা পাওয়া যাওয়ায় ভোট প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে বলা যায়। দিল্লিতে সংসদ বিষয়ক কাজ ছাড়া শতাব্দী রায় শুধুমাত্র যে তাঁর নির্বাচনক্ষেত্রে মাটি কামড়ে ও আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন তাই নয়, বিগত লোকসভা, বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণও শুরু করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই দলের জেলা নেতৃত্ব শতাব্দী রায়কে পুনরায় প্রার্থী করার জন্য দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে লিখিতভাবে আবেদনও জানিয়েছেন। আর এরফলে দলের জেলা নেতৃত্বকে কাছে পেয়ে শতাব্দী রায়ের আত্মবিশ্বাসও বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে তা তাঁর ধারাবাহিক দলীয় কর্মসূচি রূপায়নের মধ্যে দিয়েই সামনে আসছে।
সাংসদ শতাব্দী রায় তাঁর সাংসদ তহবিলের বরাদ্দ অর্থ নিয়ে যে সব অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে দলীয় কার্মীদের কাছ থেকে কৈফিয়ত চাইতেও শুরু করে দিয়েছেন। সিউড়ি পৌরসভা এলাকায় সাংসদ তহবিলের বরাদ্দ ৬০ লক্ষ টাকায় পথবাতি লাগানো নিয়ে অনিয়মের অভিযোগকে কেন্দ্র করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সেইসাথে তিনি বিগত লোকসভা ভোটে যে সব এলাকায় ভোট প্রাপ্তির হিসেবে পিছিয়ে থেকেছেন অথচ বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও পৌরসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের জয় নিয়েও যেমন খোঁচা দিয়েছেন তেমনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, দলীয় কর্মীরা নিশ্চয়ই পঞ্চায়েত ও পৌরসভা ভোটে যে ভাবে ভাই, স্ত্রী, কাকা, কাকীমাদের জন্য কাজ করেছেন, সে ভাবে লোকসভা ভোটে তাঁর ক্ষেত্রে করেননি। বিগত বিধানসভা ভোটে জেলার মধ্যে একমাত্র যে দুবরাজপুর বিধানসভা আসনটি বিজেপি দখল করেছে, সেটি রয়েছে শতাব্দী রায়ের সাংসদ এলাকার মধ্যে। আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই এবার শতাব্দী রায় যে সব এলাকাগুলিতে তৃণমূল কংগ্রেস পিছিয়ে পড়েছে সেইসব এলাকার কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করতে শুরু করে দিয়েছেন। আর এইসব বৈঠকগুলিতে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি নিয়েই বেশি আলোচনা করা হচ্ছে। তাঁর সাংসদ এলাকার মহম্মদবাজার ব্লকের ১১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে কাপিষ্ঠা, রামপুর ও আঙ্গারগড়িয়া–এই গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। ওইসব এলাকার দলীয় কর্মীদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে শতাব্দী রায় তাঁদের নির্দেশ দিয়েছেন, উন্নয়নের রিপোর্ট কার্ড তৈরী করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে লোকসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সেইসাথে তিনি আশাও প্রকাশ করেন যে, পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, লোকসভা ভোট আমাদের দিকেই আসবে। শতাব্দী রায় এমন অনেক এলাকায় পিছিয়ে গিয়েছেন, যে সব এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটারদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সেই ভোট ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গও সামনে এসেছে। সোমবার ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনের বিষয়ে সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, ভগবান এমনভাবে ব্যবহারের জায়গায় চলে যাচ্ছে যে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করতে হচ্ছে। ভগবানের স্বাধীনতা নেই যেন। মন্দির সম্পূর্ণ হওয়ার আগে রামলালার মূর্তি প্রতিষ্ঠার কারণে শঙ্করাচার্যরা আসছেন না। আসলে এটা সম্পূর্ণ ওদের রাজনৈতিক। ওইদিন তাঁরা ব্লকে ব্লকে সম্প্রীতি মিছিল করবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন সাংসদ শতাব্দী রায়।।
ছবি : কর্মী সভায় সাংসদ শতাব্দী রায়।