Spread the love

ছেঁটে ফেলা হলো বিষবৃক্ষের ডালপালা

বিজেপির জাতীয় সম্পাদকের পদ থেকে অপসারিত অনুপম

         খায়রুল  আনাম

আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রস্তুতিপর্বে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  অমিত  শাহকে নিয়ে বিজেপির  সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রসাদ নাড্ডা একদিনের কলকাতা সফরে এসে রাজ্যে লোকসভা ভোট পরিচালনার জন্য  যে ১৫ জনের নির্বাচনী কোর কমিটি ঘোষণা করেন তাতে নাম পাওয়া যায়নি এ রাজ্যের বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা বিজেপির জাতীয় সম্পাদক  অনুপম   হাজরার।  বুধবার ২৭ ডিসেম্বর  অমিত শাহ এবং জগৎপ্রসাদ নাড্ডা  কলকাতা ছাড়ার  সাথে সাথেই সামনে আসে যে, অনুপম হাজরাকে দলের  জাতীয় সম্পাদকের পদ  থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।  এমন কী,  বুধবার  ২৭ ডিসেম্বর অনুপম হাজরাকে দিল্লিতে তাঁকে দেওয়া বাংলো ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতীকে  বোলপুর লোকসভা  আসন থেকে ২০১৪ সালে জিতে অনুপম হাজরা সাংসদ হলেও পরবর্তীতে  তিনি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে দলের  জাতীয় সম্পাদকের পদ দেয়। দল তাঁকে কলকাতায় লোকসভা ভোটে প্রার্থী করলেও তিনি জিততে পারেননি। তাঁকে  ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তাও দেওয়া হয়। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকেই অনুপম হাজরা  বিজেপিতে থেকেও সমাজ মাধ্যমে দলের রাজ্য  সভাপতি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার,  রাজ্য সম্পাদক  অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে  নানা ধরনের মন্তব্যই শুধু করেননি,  তিনি মন্তব্য করেন যে,  সুকান্ত  মজুমদারের সঙ্গে দলের কর্মীরা নেই। তিনি মন্তব্য করেন যে, সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে  ২০ জন লোক থাকলে তারমধ্যে ১৮ জনই নিরাপত্তাবাহিনীর লোকজন।  রাজনীতির ভিত্তিমূলহীন  যে অনুপম হাজরার গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনেও জেতার ক্ষমতা নেই বলে বলা হয়,  সেই অনুপম হাজরার সমাজমাধ্যমে  একের পর এক মন্তব্যে দলীয় পদাধিকারীদের নিয়ে মন্তব্যে দলকে বার বার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এমন কী, বীরভূমে দলের একমাত্র বিধায়ক দুবরাজপুরের  অনুপকুমার সাহা সম্পর্কেও তিন বিরূপ মন্তব্য করেন।  শান্তিনিকেতনে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি ধর্ণা মঞ্চের সামনের রবীন্দ্র প্রতিমূর্তিতে মাল্যদান করতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গেও কথাবার্তা  বলেন বলে অভিযোগ ওঠে। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য  এই ঘটনায় বিরক্ত প্রকাশ করে বলেন, অনুপম হাজরা তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে পা বাড়িয়েই আছেন। উনি সেখানে যেতে চাইলে যেতেই পারেন।  আর অনুপম হাজরা বলেন, লোকসভা ভোটি বিজেপি ২০০ পার বললেও ২৭-শেই আটকে যাবে। অথচ আগামী লোকসভা ভোটে এরাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে ৩৫ টি জয়ের লক্ষ্যে নামতে চাইছে বিজেপি। অনুপম হাজরার এইসব আচরণের প্রতিবাদে শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন জায়গায় অনুপম হাজরার সঙ্গে  বর্তমানে দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি তৃণমূল কংগ্রেসের অনুব্রত মণ্ডলের ছবি-সহ ছাপানো পোস্টার  পড়ে।  আদি বিজেপি কর্মীবৃন্দ নামের ওই পোস্টারে লেখা ছিলো–সেটিংবাজ  অনুপমকে  অবিলম্বে বিজেপি থেকে  বহিষ্কার করা হোক ও অকালকুষ্মাণ্ড  অনুপম হঠাও, বিজেপি বাঁচাও। এসব কারণে দেখা যায়, ২৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  অমিত শাহ যখন কলকাতায় আসেন তখন অনুপম হাজরা সেখানে ডাক-ই পাননি। আর অমিত শাহের এই সভার প্রচারে  ২৭ নভেম্বর বিজেপির বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী যখন  রামপুরহাটে আসেন তখন রামপুরহাটের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহার বিরুদ্ধে  ছাপানো পোস্টার পড়ে।  যাতে লেখা ছিলো–পৌরসভা ভোটে  বীরভূমে তৃণমূলের কাছে  টাকা খেয়ে  বিজেপিকে হারানোর কাণ্ডারি  ধ্রুব সাহা দূর হটো। আবার ১৮ ডিসেম্বর শুভেন্দু অধিকারীর সাঁইথিয়া সফরের দিন ধ্রুব সাহার বিরুদ্ধে  একই ধরনের পোস্টার পড়ে। এইসব ঘটনা অনুপম হাজরার মদতেই ঘটেছে বলে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়। এক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলকে নিজের দিকে মঞ্চে টেনে নিয়ে পরোক্ষেে অনুপম হাজরাকে  অপ্রাসঙ্গিক  করে দেন। জেলায় দলের একমাত্র বিধায়ক অনুপ কুমার সাহা এবং ধ্রুব সাহার বিরুদ্ধে  বিজেপিরই একটি গোষ্ঠী  খয়রাশোল থানায় অনুপম হাজরার জনসভার মঞ্চ ভাঙচুর করার অভিযোগ দায়ের করেন। অনুপ কুমার সাহা এবং ধ্রুব সাহাকে এজন্য কলকাতা হাইকোর্ট  থেকে জামিনও নিতে হয়।

    তাই এবার বিজেপি অনুপম হাজরাকে দল থেকে তাড়িয়ে না দিয়ে লোকসভা ভোটের আগে তাঁকে একেবারে অপ্রাসঙ্গিক করে দিলো। দল ছাড়লে সে নিজে ছাড়ুক- আমরা তাড়াচ্ছি না, এমনই মনোভাব দেখিয়েছে বিজেপি।  আর   দলের সাথে টানা খেলা খেলে লোকসভা ভোটে  দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চাপের রাজনীতি করতে গিয়ে এবার অথৈ জলে পড়ে খাবি খাওয়ার মতো অনুপম হাজরাকে বলতে হচ্ছে–বিজেপির মহাসচিব  অরুণ সিং জানিয়েছেন, সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রসাদ নাড্ডার নির্দেশেই তাঁকে সরানো হয়েছে। দলীয় শর্ত মেনে চললে তাঁকে না কি  আবার পদ ফিরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যদিও বিজেপি সূত্র বলছে, দল তাঁকে একেবারে তাড়িয়ে না দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে। এবার ওঁকে যেতে হলে নিজেকেই দল ছেড়ে যেতে হবে।  রাজনীতির বিষবৃক্ষ অনুপম হাজরাকে যে এমন বিড়ম্বনায়   পড়তে  হবে, তা হয়তো তিনি কল্পনাও  করতে পারেননি।   রাজনীতির ‘কাঁচা খেলোয়াড়’  অনুপম হাজরা এবার সেটাই টের পাচ্ছেন।

ছবি : অনুপম হাজরা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *