Spread the love

বদলীর জন্য ফৌজদারি চক্রান্তের অভিযোগ! নিম্ন আদালতের মামলা খারিজ করলো হাইকোর্ট 

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে এক বেসরকারি  ব্যাঙ্কের আধিকারিকের বদলী সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলে।  এক বেসরকারি  ব্যাংক কর্তা তাঁর ঊর্ধ্বতন আধিকারিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি চক্রান্তের অভিযোগ এনেছিলেন বদলী করানোর জন্য।’নিছক বদলি করার জন্য কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি চক্রান্তের অভিযোগ আনা যায় না’। এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে এমনটাই জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। মামলাকারী ব্যাঙ্ক কর্তা কে সম্প্রতি  বীরভূম থেকে ত্রিপুরায় বদলি করা হয়। এই নির্দেশের ফলে তার মানসম্মান ও আর্থিক ক্ষতি হবে বলে মামলাকারী অভিযোগ আনেন নিম্ন আদালতে।নিম্ন আদালত অভিযোগ গ্রহণ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে। যে নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ করে  হাইকোর্টের দারস্থ হন নিম্ন আদালতে অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক কর্তা।ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে, -‘ ওই কর্মীর বিরুদ্ধে এক মহিলা কর্মীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ এসেছিল। তাই প্রশাসনিক নির্দেশে তাকে বদলি করা হয়। দ্বিতীয়ত, তিনি বীরভূমে পাঁচ বছরের বেশি সময়কাল রয়েছেন’। অভিযোগকারীর অভিযোগ এবং নিম্ন আদালতের নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অজয় কুমার মুখোপাধ্যায় খারিজ করেছেন। সেইসঙ্গে নিম্ন আদালতের সমালোচনা করে রায়ে বলা হয়েছে, -‘ কোন নির্দেশ জারি করার সময় যথাযথ বিচারবোধ প্রয়োগ করতে হবে। গতানুগতিক নিয়মে সমন জারি করলে চলবে না’।কোম্পানির নিয়ম মেনে ট্রান্সফার করা কোনও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধ নয়। এমনকি তাঁকে অবিলম্বে পোস্টিংয়ের জায়গায় কাজে যোগ দিতে বলাও অপরাধ নয়। এই মামলার পর্যবক্ষণে এমনটাই জানাল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় একটি ব্যাঙ্কের  আধিকারিকের বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলা বাতিলের সময় এই পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, -‘ যদি কোনও ব্যাঙ্ক তার ট্রান্সফার নীতি অনুযায়ী কর্মীকে ট্রান্সফার করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা ভারতীয় দণ্ডবিধি ৫০৬ ধারার অধীনে ভয় দেখানো বা হুমকির মতো অপরাধমূলক কাজ নয়। একই সঙ্গে একজন কর্মচারীকে অবিলম্বে তার পোস্টিং জায়গায় যোগদান করতে বলাও কোনও অপরাধমূলক কাজ হতে পারেন না।ব্যাঙ্কের এইচআর ম্যানেজারের বিরুদ্ধে একজন অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর চরিত্র হননের জন্য এবং তাঁকে অন্যত্র ট্রান্সফার করার জন্য কয়েকজন আধিকারিকের সঙ্গে বসে ওই এইচআর ম্যানেজার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনি ওই এইচআর ম্যানেজার এবং আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ৫০৬ নম্বর ধারায় মামলা করেছিলেন। মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট সমনও জারি করেন। এর পর এইচআর ম্যানেজার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।তিনি ( এইচআর ম্যানেজার) হাইকোর্ট কে বলেন, -‘অভিযোগরীর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কের এক মহিলা আধিকারিরকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ ব্যাঙ্কের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যায়। একটি অলোচনার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ তাঁকে ত্রিপুরা ট্রান্সফারের সিদ্ধান্ত নেন।এর পাশাপাশি  ব্যাঙ্কের একই শাখায় পাঁচ বছর থাকার পর ট্রান্সফার নীতি অনুযায়ী সাধারণত আধিকারিকদের বদলি করা হয়’। তিনি জানান -‘অভিযোগকারী বীরভূম শাখায় ছ’বছর পূর্ণ করেছেন’।ওই এইচআর ম্যানেজার আদালতকে আরও বলেন, -‘অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি প্যালেনে ছিলেন না এবং তিনি এই স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জড়িত নন’।শুনানির পর সমস্ত ফৌজদারি অভিযোগ বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত ফৌজদারি অভিযোগ গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটেরও সমালোচনা করেছে। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে -‘  অভিযোগটি যাচাই না করেই সমন জারি করা হয়েছিল’। ফৌজদারি মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আগে প্রাথমিক জবানবন্দি রেকর্ড করার সময় ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা নীরব দর্শকের মতো হতে পারেনা বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের এজলাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *