উলটপুরাণ কলেজ শিক্ষক রাজেশ খান রাজনীতিতে
অধ্যয়নের আঙিনা ছেড়ে রাজনীতিতে প্রবেশ কলেজ শিক্ষকের। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হলেন রাজেশ খান। নদীয়া জেলার করিমপুর ২ ব্লকের মুরুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে প্রার্থী হয়েছেন রাজেশ। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ২০১৬ সালের শেষ ছাত্র নির্বাচনে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের প্রতিনিধি (ফ্যাকাল্টি রিপ্রেজেন্টেটিভ) হিসেবে নির্বাচিত হন। কিছু দিন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক সমিতির সহ সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্টেট এইডেড কলেজ টিচার ১ হিসেবে কর্মরত। এহেন একজন শিক্ষক তথা গ্ৰামের ছেলে, ভূমিপুত্রকে প্রার্থী হিসেবে পেয়ে ভীষণ খুশি এলাকাবাসী। রাজেশ খানকে নিয়ে এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া, চরম আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যেও ছোট্ট একটি চায়ের দোকান চালিয়ে রাজেশের পিতা সহীদুল খান তার তিন ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। একটা গরীব পরিবেশে বেড়ে ওঠা সন্তান গরীবের দুঃখ-দূর্দশার কথা বেশি করে পরখ করবে। তাই এলাকাবাসী রাজেশকে পেয়ে ভীষণই খুশি।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে বর্তমান সিদ্ধান্ত নেওয়া রাজেশের কাছে চরম চ্যালেঞ্জ ছিল বলে তিনি জানিয়েছেন।
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতকোত্তর ও বি.এড-এ রাজেশ প্রথম শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বি.এড করেছেন বেলুড় মঠ রামকৃষ্ণ মিশনের মত একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। ২০১৩ সালে নেট জেআরএফ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ফেলোশিপ নিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগ থেকে এম.ফিল সম্পন্ন করেছেন ২০১৮ তে। এম.ফিলেও প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন। এরপরই পিএইচডির গবেষণার কাজ শুরু। ইতিমধ্যে পিএইচডির থিসিস জমাও দিয়েছেন। কাজও করেছেন এলাকার জনপ্রিয় কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীকে নিয়ে। এই অধ্যয়নের পাশাপাশি সমান তালে চলছে শিক্ষকতা। সবমিলিয়ে রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ একটা নতুন চ্যালেঞ্জ বলে রাজেশ তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, কঠোর গরিবণার মধ্যে আমরা পড়াশোনা করে বড়ো হয়েছি, তাই এলাকাবাসী আমাকে আশীর্বাদ করলে, কাজ করার সুযোগ দিলে আমার কাছে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে এলাকার যুবক-যুবতীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রতি মনোনিবেশ করা। তিনি আরও বার্তা দেন, শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের আরো বেশি করে রাজনীতিতে আসা উচিত।
শিক্ষা দুর্নীতি যখন বিরোধী দলের কাছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার, তখন একজন কলেজ শিক্ষক শাসকদলের হয়ে নির্বাচনে লড়ার অঙ্গীকার রাজনীতিতে নতুন আলোর দিশা বলেই অনেকে মনে করছেন অনেকে।
রাজেশ খানের গাইড কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ফোকলোর) লোকসংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুজয় কুমার মন্ডল বলেন “ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক সূত্রে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়াটা খুবই জরুরী। একজন শিক্ষিত যুবক রাজেশ সেই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছে তা রাজনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভালো কথা।”