অভিনব উদ্যোগে প্রথম বছরেই
নজর কাড়ল হাড়োয়া বইমেলা
———————————————-‐—————-

মহম্মদ মফিজুল ইসলাম, হাড়োয়া: উত্তর ২৪ পরগণার হাড়োয়া সার্কাস ময়দানে ২১ জানুয়ারি শুরু হল তিন দিনের প্রথম হাড়োয়া বইমেলা২০২৩। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও হাড়োয়ার ভূমিপুত্র ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও সাহাদাত হোসেন স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাদা পায়রা ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বনামধন্য বিজ্ঞানী ড.অর্চন কান্তি দাস। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই ‘বই কিনুন, বই পড়ুন ও উপহার দিন বই’ এই শিরোনামে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা গোটা হাড়োয়া বাজার পরিক্রমা করে। কবি, লেখক, প্রকাশক সহ হাজার-হাজার বইপ্রেমী মানুষ এই পথ পরিক্রমায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

ফরিদ জমাদার ও আব্দুল খালেকের মূল পৃষ্ঠপোষকতায় এই বইমেলার আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, এই বইমেলার খরচ বাবদ কারও কাছে থেকে অর্থ বাবদ কোনও চাঁদা নেওয়া হয় নি। এমন কী যাঁরা স্টল পেয়েছেন তাঁদের থেকেও কোনও চাঁদা নেওয়া হয় নি। পুরো খরচ বহন করেছেন ফরিদ জমাদার ও আব্দুল খালেক। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এই বইমেলা উপলক্ষ্যে একটি অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়। বইমেলায় আগত সবাইকেই দু’শো টাকার একটি করে কুপন দেওয়া হয়। এই কুপনের বিনিময়ে বইপ্রেমীরা সরাসরি স্টল থেকে বই কেনার সুযোগ পান। বই কেনার জন্যে ক্রেতাদের পকেট থেকে কোনও টাকা দিতে হয় নি।

২২ জানুয়ারি বিকেল থেকে শুরু হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করে। আবৃত্তি ও বক্তৃতার পাশাপাশি নৃত্য পরিবেশন করে একঝাঁক খুদে পড়ুয়া। এদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় কবি সম্মেলন। সম্মেলনে এলাকার ও এলাকার বাইরের নবীন-প্রবীণ নিভৃতচারী ও প্রতিষ্ঠিত একঝাঁক আমন্ত্রিত কবি অংশগ্রহণ করেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি ও পাঠ করেন। দু’টি পর্বে এই কবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে স্থানীয় কবি ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা পারভীনের কবিতা আবৃত্তি দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

উপস্থিত ছিলেন বর্তমানে দেশে-বিদেশে সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘তালাশনামা’র লেখক ইসমাইল দরবেশ, ইতিহাসবিদ ও প্রাবন্ধিক ডা. সেখ নূরমহম্মদ, প্রসার ভারতীর সাংবাদিক ও রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপক ড. নিরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, কবি ও গীতিকার সাহাবুদ্দিন মুফতি, অ্যাডভোকেট গোপাল ব্যানার্জি, কবি সেরিনা খাতুনের কন্যা হাবিবা খাতুন, কবি ও গীতিকার আব্দুল্লা আল মাসুম, শিক্ষক ও কবি আসাদুজজামান, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল্লাহ সামীম ও ড.আয়াতুল্লা ফারুক ও সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়র অধ্যাপক ড. রবিউল ইসলাম, কবি ও গীতিকার সাহাবুদ্দিন মুফতি, সমাজসেবী সৌমিক রায় অধিকারী ও হাড়োয়া থানার ওসি বাপ্পা মিত্র। উপস্থিত অতিথিদের বক্তব্য থেকে মূল নির্যাস উঠে আসে, “ইদানিং আমরা বই থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এই অবস্থায় মানুষের মধ্যে বই পড়ার নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তোলা বিশাল প্রয়োজন। মোবাইল থেকে দূরে থেকে ঘরে ঘরে বই পৌঁছে যাক। বই কিনুন। বই পড়ুন। উপহার দিন বই।”

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ভাঙ্গড়ের ভূমিপুত্র শিক্ষক-সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও কবি তথা ‘বঙ্গনূর’ পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক মহম্মদ মফিজুল ইসলাম এবং সাংবাদিক, কবি ও গীতিকার আসাদ আলী একগুচ্ছ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

কবিতা পাঠের আগে সকল কবিকে উত্তরীয়, ব্যাজ ও পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করা হয়। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে প্রত্যেক কবিকে একটি করে সম্মাননা স্মারক ও মিষ্টির প্যাকেট উপহার দেওয়া হয়। স্টলে স্টলে বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় ও হাজার হাজার শ্রোতা ও দর্শকদের উৎসাহ উদ্দীপনা এবং স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ফরিদ জমাদার, আব্দুল খালেক ও হাফেজ আব্দুল আজিজের অনবদ্য সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি অন্য মাত্রা পায়।

উদ্যোক্তাদের আন্তরিকতা আতিথেয়তা ও ব্যবস্থাপনা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। উপস্থিত কবিদের পক্ষে কবি মহম্মদ মফিজুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট সকলকেই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

Leave a Reply