ধন্য কলিকাল
প্রদীপ বাগ
সেকালের মানুষগুলো ছিল বড় সরল ছাপোষা-মোটা ভাত মোটা কাপড় এই ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনের দশা,
রেডিও’র প্রভাতী অনুষ্ঠান, দেবদুলাল বা ইভা নাগের খবর শোনা,গল্পদাদুর আসর,খেলা দেখা,সংবাদ পরিক্রমা আর দূর্গা পূজার আগে মহালয়া শোনা।
একান্নবর্তী পরিবার যিনি বয়জেষ্ঠ্য তাঁর তত্ত্বাবধানে ছোট বড় প্রত্যেকেই নিয়ম নীতি মেনে চলতে হতো,
পরিবার ও সমাজে অলিখিত বাঁধন ছিল,প্রতিবেশীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রত্যেকেই সন্মান দিত।
দারিদ্র্যের মাঝেও মনুষ্যত্ব বোধ তখনও হারায়নি,ছিল জীবন ধারণের খুব সিমীত চাহিদা,
গ্যাস কিংবা হ্যাজাকের আলো উৎসব অনুষ্ঠানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের ঢল প্রাণভরা খুশীর বারতা।
কংক্রিটের শহরে আলোর রোশনাই আধুনিক সভ্যতার
করাল গ্রাসে সমাজ সংস্কৃতি অবক্ষয়ে নিমজ্জিত পৃথিবী,
শাস্ত্র পুরাণ মতে চার যুগ-সত্য ত্রেতা দ্বাপরের পবিত্রতা পার করে কলিকালে প্রকাশ্যে উচ্ছৃঙ্খলতা নাকি এটাই রীতি।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থের বিরোধে আত্মীয় স্বজন ভেঙে চুরে তছনছ কথায় কথায় উঠেছে বিভেদের পাঁচিল,
একান্নবর্তী পরিবার উঠে গেছে, শিশুদের শৈশব বন্দী কিন্ডার গার্ডেনে,নারী পুরুষ আজ সবাই স্বাধীন!!
সাদাকালোটিভি,ভিডিও,ডিভিডি,ল্যান্ড ফোন পুরোনো বাতিল-চাই স্মার্টফোন,ল্যাপটপ ফ্রিজ দেওয়াল টিভি,
নিত্য নতুন বাড়ে চাহিদা ধার করে বজায় আভিজাত্য, বিজ্ঞাপনের নতুন আপডেট বিজ্ঞানের অগ্রগতি সবই।
মান সম্মান থোড়াই কেয়ার সবাই- সবাইয়ের গলদ খোঁজে গাড়ি বাড়ি আভিজাত্য চাহিদার তুঙ্গে সমাজের অবস্থান,
কাড়িকাড়ি টাকা চাই-টাকা রঙিন পেয়ালায় কয়েক ঘণ্টার প্রেমের নাটক হোটেল,বাগানবাড়ি যায় যাক একটু আত্মসম্মান।
নেয়ে-ধুয়ে সব ফ্রেস শিক্ষিত আধুনিক সমাজ উগ্র বডি-স্প্রে চাপা পড়ে যায় বেলেল্লাপনার উৎকট গন্ধ,
চেতনার পাল ছেঁড়া মানবিকতার ভাঙ্গা তরী দিকভ্রান্ত ভেসে বেড়ায় সমাজ সাগরে নগ্নতার কলিকাল ধন্য।।