যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায়:
পার্থপ্রতিম সেন (প্রাক্তন চেয়ারম্যান পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাংক)
ব্রিটেনে ব্রেক্সিট অর্থাৎ ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে পাকাপাকি ভাবে সরে যাওয়া ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি তারপর কোভিডের ধাক্কা তারপর এই বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অপরিণামদর্শিতা সবকিছু মিলিয়ে ব্রিটেনের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা।
গত ত্রৈমাসিকে ব্রিটেনে জিডিপি বা মোট ঘরোয়া উৎপাদনের গ্ৰাফ ছিল নিম্নমুখী।
অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মধ্যে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক প্রাঙ্গনেও চমক ও নাটকীয়তার মধ্যে একের পর এক প্রধানমন্ত্রী বদল হয় – বরিস জনসন থেকে লিজ ট্রাস থেকে ঋষি সুনক। তিন জনেই ব্রিটিশ কনজারভেটিভ দলের এমপি।
বরিস জনসন পদত্যাগ করার পর যখন লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তিনি ব্যাপক হারে কর কমানোর এবং ব্রিটেনের আর্থিক প্রগতির হার বৃদ্ধি করার কথা বলেছিলেন।
কর কমানোর প্রস্তাব দিয়ে যদিও মিনি বাজেট পেশ করা হয়, কিন্তু এর জন্য অর্থ সংস্থান করতে গিয়ে সরকারকে হাজার হাজার কোটি পাউন্ড ঋণ নিতে হত।
তাই বাজেট পেশ করার সাথে সাথেই ব্রিটিশ অর্থনীতিতে এক নজিরবিহীন সংকটের সৃষ্টি হয়। শেয়ার মার্কেটে ধস নামে, ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম পড়ে যায়, ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি পায়, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা নির্বাহে খরচ বেড়ে যাওয়া সব মিলিয়ে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়।
তারপর লিজ ট্রাসের মন্ত্রীসভা
থেকে অর্থমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী পদত্যাগ করেন এবং লিজ ট্রাস টোরি এমপিদের আস্থা হারান।
তারপর আমরা জানি টোরি এমপিদের সমর্থনে ৪২ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনককে রাজা তৃতীয় চার্লস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সবধরনের খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানি তেল, গ্যাসসহ সব ধরনের জ্বালানি পণ্যের দাম উর্দ্ধমুখী। নিত্যপণ্যের এই মূল্য বৃদ্ধিতে শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ নাজেহাল।
খাদ্য ও জ্বালানি সহ প্রায় সব রকম পণ্যের দাম বাড়ার ফলে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি গত একচল্লিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে।
যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষ ” অফিস ফর ন্যাশনেল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস)” এর তথ্য অনুযায়ী জানা যায় গত অক্টোবর মাসে ব্রিটেনের কনজিউমার্স প্রাইস ইনডেক্স বা রিটেল মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১.১ শতাংশ যা কিনা গত একচল্লিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এই মূল্যস্ফীতির ফলে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি ঋণ প্রদানের উপর সুদের হার বাড়িয়েছে এবং সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেয়া সুদের উপর খরচ বেড়েছে এবং যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।
এই অবস্থায় ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট আজ ১৭ নভেম্বর অটাম স্টেটমেন্ট বা শরৎকালিন বাজেট পেশ করবেন।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই বাজেটে কিছুক্ষেত্রে কর বাড়িয়ে এবং কিছুক্ষেত্রে সরকারি খরচ কমিয়ে হয়ত সরকারের আয় বাড়ানোর প্রস্তাব থাকবে।
প্রকৃতপক্ষে ঋষি সুনকের কাছে এটি একটি অগ্নিপরীক্ষার মতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং আগামীদিনে তিনি কিভাবে দেশের সংকটজনক আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দেন, সেইদিকে পুরো বিশ্বের নজর থাকবে।