Spread the love

কেন এত ক্ষোভ?,

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

 দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সমস্যা যখন  সমাধানের পরিবর্তে বেড়েই চলে এবং  মানুষের মনের মধ্যে চেপে থাকা পুঞ্জিভূত  রাগ যখন সহ্য সীমা অতিক্রম করে যায় তখনই সেটা ক্ষোভ হিসাবে ঝরে পড়ে। যে ঘটনা বারবার দ্যাখা যায় পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইন শাখার খানা থেকে রামপুরহাটের মধ্যে অবস্হিত বিভিন্ন স্টেশনে। যেমন কয়েক দিন আগে খানা জংশন স্টেশনে যাত্রীরা ট্রেন অবরোধ করতে বাধ্য হয়। 

   হাওড়া-দিল্লি প্রধান লাইনের একটি অংশ হলো সাহেবগঞ্জ লুপ লাইন যা খানা ও কিউল জংশনের মধ্যে সংযোগ স্হাপন করেছে। এই লাইনে আছে কবিগুরুর স্বপ্নের শান্তিনিকেতন। তারাপীঠকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। সেখানে তো ভিড় লেগেই আছে। এই লাইন ব্যবহার করে ভ্রমণকারীরা বীরভূম জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেতে পারে।

   অন্যদিকে আছে নিত্যযাত্রী ও সাধারণ যাত্রীরা। বীরভূম জেলার একটা বড় অংশ এবং সংলগ্ন মুর্শিদাবাদ ও বিহারের একটা অংশ এবং পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট, আউসগ্রাম ও ভাতারের বাসিন্দাদারা এই লাইনের ট্রেন ধরে বর্ধমান ও কলকাতা যাতায়াত করে। এছাড়া চাকুরীজীবি ও ছাত্রছাত্রীরাও নিজ নিজ জায়গায় যাওয়ার জন্য এই লাইন ব্যবহার করে।

  মালপত্র আনার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার  ব্যবসায়ীরা এই লাইনের ট্রেন ধরে কলকাতা বা বর্ধমান যায়। সব্জী বিক্রেতারা যায় স্হানীয় বাজারে। কৃষি শ্রমিকরাও এই লাইনের ট্রেন ধরে কাজে যায়।

  অর্থাৎ বিভিন্ন দিক দিয়ে এই লাইনের গুরুত্ব আলাদা হলেও দীর্ঘদিন ধরে লাইনটি অবহেলিত থেকে গ্যাছে। লকডাউনের পর থেকে সেই অবহেলা যেন আরও বেড়ে গ্যাছে। সকালের দিকে আপ মালদা টাউন ও জয়নগর এবং ডাউন বারাণসী শিয়ালদহ ট্রেনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আপ রাজগির থাকা না থাকা সমান। অথচ সময়ের প্রতি নজর দেওয়া হলে বিশ্বভারতীর আগে চলা রাজগির ট্রেনটি নিত্যযাত্রী ও ব্যবসায়ীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত। ডাউন বারাণসী শিয়ালদহ ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এই লাইনের যাত্রীরা সরাসরি শিয়ালদহ যেতে পারেনা। ডাউন রামপুরহাট বর্ধমান (০৩০৭৪) ট্রেনটি অধিকাংশ দিন দেরিতে চলাচল করে। আবার এক্সপ্রেস নাম দিয়ে লোকাল ট্রেনগুলো থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এটা অবশ্য শুধু এই লাইন নয় অন্যান্য লাইনের সমস্যা।

   মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো পার করাতে গিয়ে অধিকাংশ সময় লোকাল ট্রেনগুলো বিভিন্ন স্টেশনে দীর্ঘদিন সময় ধরে অযৌক্তিক ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। আপে বর্ধমান স্টেশনের তিন থেকে সাত নাম্বার প্লাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাওয়া লোকাল ট্রেনগুলোকে একইভাবে স্টেশনের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়ে নিত্যযাত্রীরা। বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়না। রেল কর্তৃপক্ষের ভাবখানা এমন যেন লুপ লাইনে লোকাল ট্রেনগুলোতে যারা যাতায়াত করে তারা আদপে মানুষ নয়। 

  সমস্যা সমাধানের বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার জন্য মাঝে মাঝে নিত্যযাত্রীরা রেল অবরোধ করতে বাধ্য হয়। দিল্লিগামী বিভিন্ন সুপার ফাস্ট ট্রেনগুলো চলাচল করে বলে খানা জংশনে অবরোধ হলে কিছুটা গুরুত্ব পাওয়া যায়। অন্য স্টেশনের অবরোধকে কার্যত গুরুত্ব দেওয়া হয়না।  মাঝে মাঝে অবরোধ হয়। রেল কর্তৃপক্ষ সমাধানের আশ্বাস দেয় এবং সেটা যথারীতি পালন করা হয়না। ফলে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়না।

   শিউলি, সন্দীপ, তপন, মনোরমা সহ একাধিক ছাত্রছাত্রী গুসকরা কলেজের প্রাতঃ বিভাগে পড়াশোনা করে এবং তারা বনপাস ও নওদারঢাল স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে। তাদের বক্তব্য আপ মালদা টাউন ট্রেনটি বন্ধ হওয়ার জন্য আমাদের ক্লাস করতে যেমন অসুবিধা হয় তেমনি ডাউন ০৩০৭৪ ট্রেনটি অধিকাংশ দিন দেরিতে চলাচল করায় বাড়ি ফিরতে সমস্যা হয়। একই অভিযোগ বিভিন্ন অফিসে কর্মরত নিত্যযাত্রীদের।

   যোগাযোগ করেছিলাম রেলের হাওড়া ডিভিশনের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে। কিন্তু যোগাযোগ করতে না পারার জন্য তার মতামত জানা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *