স্বেচ্ছায় রক্তদানের আহ্বানে হুগলির ‘যুবক’,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,
শুধু মুমূর্ষু রুগীর জন্য নয় অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের আগেও রক্তের প্রয়োজন হয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রুগীদের বেঁচে থাকার জন্য রক্ত অপরিহার্য। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে 'স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির' এর আয়োজন করা হলেও সেখানে প্রত্যাশা বা প্রয়োজনের তুলনায় কম রক্ত সংগৃহীত হয়। ইচ্ছে থাকলেও রক্তদান নিয়ে এখনো সাধারণ মানুষের মনে একটা ভয় ও কুসংস্কার আছে। এবার সেই কুসংস্কার ও ভয় দূর করার লক্ষ্যে এবং যুবসমাজকে রক্তদানে উৎসাহিত করার জন্য সাইকেলে কার্যত সাগর থেকে পাহাড় ভ্রমণে বের হলেন 'সাইকেল ম্যান অফ রক্তদান ইন্ডিয়া'-র জয়দেব রাউত।
জয়দেব বাবু হলেন 'ফেডারেশন অফ ব্লাড ডোনার্স অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়া'-র ব্রান্ড সাইকেল রাইডার। একদল শুভানুধ্যায়ী মানুষের শুভেচ্ছাকে পাথেয় করে গত ৭ ই জুন তিনি সাইকেলে চেপে কলকাতার রক্ত ভবন থেকে যাত্রা শুরু করেন। গন্তব্যস্থল উত্তরবঙ্গ। বন্যা জনিত কারণে সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি শিলিগুড়ি থেকে পুনরায় দক্ষিণবঙ্গের দিকে রওনা দেন। নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, দুই দিনাজপুর, বীরভূম হয়ে তিনি ৩০ শে জুন এসে পৌঁছান পূর্ব বর্ধমানের গুসকরায়। শহরে প্রবেশ করার মুখে গুসকরা নদীপট্টি এলাকায় পুষ্পস্তবক দিয়ে তাকে বরণ করে নেয় গুসকরা বিষাণ অ্যাথলেটিক ক্লাব। একইসঙ্গে ক্লাবের পক্ষ থেকে তার হাতে একটি মানপত্রও তুলে দেওয়া হয়। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন ক্লাব সম্পাদক সৌগত গুপ্ত সহ অন্যান্য ক্লাব সদস্যরা। প্রসঙ্গত বিষাণ অ্যাথলেটিক ক্লাব প্রতি বছর স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে থাকে। যাইহোক এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শিরিষ তলায় ক্লাব অফিসে। যাওয়ার পথে রাস্তার দু'পাশে উৎসাহি মানুষের ভিড় ছিল যথেষ্ট। তিনি তাদের প্রত্যেককে স্বেচ্ছায় রক্তদান করার জন্য আহ্বান করেন। জানা যাচ্ছে আজ তিনি সংশ্লিষ্ট ক্লাবের অতিথি হিসাবে গুসকরায় রাত্রিবাস করবেন। জয়দেব বাবু প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলাণ্টারী ব্লাড ডোনার্স ফোরামের স্হায়ী সদস্য বছর বাহান্নর 'যুবক' জয়দেব বাবু হুগলির চাঁপদানির বাসিন্দা। তিনি স্হানীয় একটি জুটমিলের 'নো ওয়ার্ক নো পে' ভিত্তির অস্হায়ী কর্মী। মাত্র আঠারো বছর বয়সে ফুটবল খেলতে গিয়ে পেটে মারাত্মক আঘাত পান। জরুরি ভিত্তিক অপারেশনের জন্য চার বোতল রক্তের প্রয়োজন হয়। এই রক্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা চরম সংকটে পড়ে। এই ঘটনা তার মনে আমূল পরিবর্তন আনে। দেশের যুব সম্প্রদায়কে স্বেচ্ছায় রক্তদান করার আহ্বান জানিয়ে তিনি সাইকেলে চেপে বেরিয়ে পড়েন। শুধু তাই নয় নিজেও ইতিমধ্যে ৩৯ বার রক্তদান করেছেন।
স্বেচ্ছায় রক্তদান আন্দোলনের ধারাবাহিক যোদ্ধা জয়দেব বাবু ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, কর্ণাটক সহ কুড়িটি রাজ্য ঘুরে ফেলেছেন। আগামী দিনে তার লক্ষ্য দেশের প্রতিটি জেলার প্রতিটি ব্লকে পৌঁছে যাওয়া। উদ্দেশ্য দেশে রক্তের সংকট মেটাতে 'জাগো রক্তদাতা জাগো' এই কর্মসূচি কে স্বার্থক রূপ দেওয়া এবং স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্রসারে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে একাজে যুক্ত করা। যদিও এই মহতী কাজের জন্য তিনি না পেয়েছেন কোনো সরকারি সাহায্য বা অফিসে বাড়তি সুবিধা। সম্বল মানুষের ভালবাসা।
জয়দেব বাবু বললেন - আমার জীবনে যে সমস্যায় পড়েছিলাম সেই সমস্যায় যাতে অন্যরা না পড়ে তার জন্য আমার এই প্রচেষ্টা। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে চরম রক্ত সংকট দ্যাখা যায়। সেই সংকট দূর করতে হলে সমস্ত শ্রেণির মানুষকে বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন - আমার বাড়িতে স্ত্রী ও দুই সন্তান আছে। সরকার যদি আর্থিক সাহায্য করত এবং অফিস যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে তাহলে খুব উপকার হতো। সরকার বা তার অফিস কি জয়দেব বাবুর আবেদনে সাড়া দেবে?