এসএসসির মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী কে সিবিআই জেরা এড়ানোর অনুরোধে চিঠি, চাঞ্চল্য হাইকোর্টে
মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু) ,
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীমহলে তীব্র চাপানউতোর চললো এক বিচারপতি কে এক আইনজীবীর পাঠানো চিঠি ঘিরে। যদিও চিঠিটি গত মঙ্গলবার প্রাপকেরা পেয়েছেন বলে প্রকাশ। এসএসসি নিয়োগ মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টপাধ্যায় কে সিবিআইয়ের জেরা এড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে এই চিঠি বলে প্রকাশ। ইতিমধ্যেই এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় নাম জড়িয়ে গেছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন । তবে, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের উপরে এক মাসের স্থগিতাদেশ জারি করেছে।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে এই চিঠি ঘিরে চাঞ্চল্য রয়েছে হাইকোর্টের অন্দরমহলে । প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যেন সিবিআই তদন্ত না হয়, তার আর্জি জানিয়ে বিচারপতিকে চিঠি দিলেন তৃণমূলের এক আইনজীবী। তবে, চিঠি দেবার কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন ওই আইনজীবী।স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর সেদিনই সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় এরপর এই নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। চার সপ্তাহের স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে ডিভিশন বেঞ্চের তরফে । যে চিঠিতে তাপস সামন্ত নামে এক আইনজীবীর নাম পাওয়া গেছে । চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে , পত্রপ্রেরক তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত, পূর্ব বর্ধমান জেলা আদালতে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তিনি। এই আইনজীবীর অনুরোধ, -‘ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এসএসসি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ না দেওয়া হোক’। সেইসাথে ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশটি আরো বারো সপ্তাহ বাড়িয়ে দেবার অনুরোধ জানিয়েছেন এই আইনজীবি।এ প্রসঙ্গে মামলাকারীর অন্যতম বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের জানান,- ‘এটা সুপরিকল্পিত চক্রান্ত, যাতে শুনানি সুব্রত তালুকদারের এজলাসে না হয় এবং তিনি যাতে মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। তার জন্য এই চক্রান্ত।,তাঁর বাড়িতে রেজিস্টার্ড পোস্টে এই চিঠির প্রতিলিপি এসেছে’। তবে তিনি তাপস সামন্তকে চেনেনই না। তাঁর সঙ্গে এবিষয়ে কোনও কথাই হয়নি। এভাবে বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে মামলাকে প্রভাবিত করা যায় না বলে জানিয়েছেন বিকাশ বাবু। এই চিঠির বিষয়ে চিঠি প্রেরক আইনজীবী তাপস সামন্ত জানিয়েছেন, -‘ কাউকে এই ধরনের চিঠি তিনি পাঠাননি। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যর সঙ্গে তাঁর কোনো পরিচয়ই নেই। তিনি জানেন না কারা লিখেছেন এই চিঠি’। তিনি বর্ধমান আদালতে প্র্যাকটিস করেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মামলার সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। তবে তিনি যে তৃণমূলকে সমর্থন করেন, তা স্বীকার করেছেন তিনি।এসএসসি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে লেখা এই চিঠিকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই চিঠিতে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ যাতে না দেওয়া হয় তার জন্য বিচারপতির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে।এমন চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে । এর পিছনে চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন মামলাকারীদের একাংশ। চিঠি প্রাপক আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দাবি করেছেন -‘ গত মঙ্গলবার স্পিড পোস্ট এই চিঠির প্রতিলিপি পেয়েছেন’। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সিবিআই হাজিরার ওপর স্থগিতাদেশটি জারি করা হয়েছে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ এর তরফে। এই পরিস্থিতিতে এই চিঠিকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এমন চিঠি কে দিতে পারে কি? তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। যদিও পত্রলেখকের জায়গায় নাম রয়েছে তাপস সামন্তের। চিঠি লেখক নিজেকে তৃণমূল কর্মী এবং বর্ধমান আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বলে দাবি করেছেন।চিঠিতে লেখা হয়েছে, – ‘আমি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত এবং বর্ধমান জেলা আদালতে অতিরিক্ত সরকারি আইনজীবী। পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এবং বর্তমান মন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে যেন সিবিআই তদন্ত না দেওয়া হয়’। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের স্থগিতাদেশের মেয়াদ বারো সপ্তাহ বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আরও লেখা হয়েছে, ‘মামলার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি সিবিআই তদন্তের আবেদন জানাবেন না’ বলে জানানো হয়েছে চিঠিতে।এ বিষয়ে গভীর চক্রান্ত দেখছেন মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য । তিনি বলেন,- ‘এর পিছনে চক্রান্ত রয়েছে। বিচারপতি তালুকদারের এজলাসে যাতে মামলার শুনানি পিছিয়ে যায়। সেটাই চাইছেন চক্রান্তকারী।’ অন্যদিকে, যার নামে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে সেই তাপস সামন্ত আসলে বর্ধমান বিশেষ পকসো আদালতের আইনজীবী। তিনি এই ধরনের চিঠি পাঠাননি বলে দাবি করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। তিনি অবশ্য বলেছেন, ‘ চিঠির বিষয়ে কিছুই জানি না। এ বিষয়ে তদন্ত করা হোক।’ এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় যেভাবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে একের পর এক নজিরবিহীন নির্দেশ জারি হয়েছে। তাতে প্রথম দিকে প্রায় সবেতেই ডিভিশন বেঞ্চের স্থগিতাদেশ জারি হলেও বর্তমানে প্রায় নির্দেশ বহাল রাখছে ডিভিশন বেঞ্চ। সেখানে নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের জেরার সম্মুখীন হওয়ার নির্দেশিকায় চার সপ্তাহের স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে। এই স্থগিতাদেশ জারির সময়সীমা এবার শেষের দিকে।পুনরায় ডিভিশন বেঞ্চে শুনানিতে উঠবে এবার।সেখানে এই ধরনের চিঠি এই মামলায় বিচারব্যবস্থা কে প্রভাবিত করার সামিল।তাই পুরো ঘটনার ( চিঠি) উচ্চপর্যায়ের তদন্তর দাবি উঠছে।