গল্প নয়কো, কাকতালীয়
শম্পা মহান্তি নাথ
কাকটি সমানেই ঈগলের ঘাড়ের উপর বসে, ঠোকর মেরে, তাকে বিরক্ত করে যাচ্ছে। এমন সাহস সেই অরন্যে আর কোনো পাখির নেই। সাহস করে অন্য কোন পাখি ঈগলের ঘাড়ে বসতে পারে না। এই কারণে কাকের বেজায় দম্ভ।
ঈগল তবুও কাকের সাথে লড়াই করতে যায় না। এই দেখে বনের অন্য পাখিরা কাককে সেলাম ঠোকে। এভাবেই বেশ কিছু দিন চলতে থাকে। কাক ফের নিজের বাহাদুরি প্রদর্শন করতে একদিন সকল বনের পাখিদের ডাকলো। সকলেই উপস্থিত হলো।
সেদিন একটি মজার ব্যাপার ঘটে গেলো। কাক বহু চেষ্টা করতে লাগলো ঈগলের ঘাড়ে বসে ঠোকরানোর কিন্তু ঈগলকে সে ছুঁতেও পারল না।
আসলে ঈগল কখনোই, কাকের সাথে লড়াই করে, বা তাকে মেরে ফেলতে গিয়ে, তার সময় ও শক্তির অপচয় করে নি।
ঈগল যেটা করেছিলো, সেটা হচ্ছে, সে দ্রুত গতিতে উপরে উঠতে থাকে। রোজকার চেষ্টায় সে অতি উচ্চতায় উঠতে থাকে। অতি উচ্চতায় অক্সিজেন স্বল্পতার কারনে, ও ঈগলের প্রচন্ড গতির কারনে, কাক তাকে ছুঁতে পারলো না। কাক দুর্বল হয়ে পড়লো এবং টিকতে না পেরে, ঈগলের ঘাড় থেকে, দ্রুত পড়ে যেতে লাগলো।
আপনার আমার জীবনেও চলার পথে, কাছের মানুষ, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবরূপি অনেক কাক আসবেন। আপনার পিছনে ঠোকর মেরে, আপনার জীবনকে ব্যহত করবে। সাময়িক ভাবে আপনাকে বিচলত করবে। এদের সাথে লড়তে গিয়ে, সময় এবং শ্রম অপচয় করার কোন প্রয়োজন নেই। নিজের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে, কাজের গতি আর পরিশ্রমকে আরও বাড়িয়ে দিন। আপনার গতির সাথে তাল মেলাতে না পেরে, ওই সব কাকেরাও একদিন দুর্বল হয়ে এমনিতেই ঝরে পড়ে যাবে।
গল্পটি কাক ঈগলের হলেও,
কাকতালীয় ভাবে এর প্রাসঙ্গিকতা আপনিও তখনই উপলব্ধি করতে পারবেন, যখন জীবনে সাফল্যের সিঁড়িতে উঠবেন; আর নিচ থেকে কাকরূপি আগাছারা আপনাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে।
ঠিক যেমনটি সেদিন ঘটে ছিলো। ঈগল উচ্চতায় উঠছিলো, আর কাকটি তার ঘাড় থেকে খসে পড়ছিলো নিচের দিকে। সেই সময়ের সন্ধিক্ষণে, বনের পাখিদের কিচির মিচির কলকাকলিতে বনানী মুখরিত হয়েছিলো উল্লাসে।