দাঙ্গায় পুত্রহারা ইমাম সাহেবের সাক্ষ্যে বেকসুর খালাস অভিযুক্তরা,
পারিজাত মোল্লা, আসানসোল,
শান্তি ও সৌভাতৃত্ববোধের উজ্জ্বল নিদর্শন আসানসোলের ইমাম সাহেব। পুত্রহারার যন্ত্রণা সাথে নিয়েও তিনি নীরব।বছর চার আগে দাঙ্গায় হারিয়েছিলেন তরতাজা ছেলেকে। তবে বদলার আগুনে যাননি ইমাম ইমদাদউল্লা রশিদ। সেসময় করজোড়ে অশান্ত আসানসোলের বাসিন্দাদের হানাহানি বন্ধে আহবান জানিয়েছিলেন। তখন বলেছিলেন, -‘ আর কোনও বাবাকে যেন সন্তানহারা হতে না হয়’।ফের শান্তির বার্তায় দেখা গেল সেই ইমাম সাহেব কে । ছেলের অপহরণ ও খুনের মামলায় আসানসোল আদালতে ধৃতদের বিরুদ্ধে সাক্ষীই দিলেন না ইমাম। এজলাসে সাক্ষ্যসানে বলেছেন , ‘ দোষীদের নিজের চোখে দেখেননি। তাই মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারবোনা’। পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল আদালতে ইমামের এই সাক্ষ্যের পর বেকসুর খালাস পায় ধৃতেরা। অপহরণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন পিন্টু যাদব ও বিনয় তিওয়ারি।উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের রামনবমীর দিন গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হয় আসানসোলের রানীগঞ্জে। রেললাইনের পাশে খুন হয়েছিলেন কয়েক জন । এই ঘটনায় স্বতঃস্ফূর্ত মামলা করে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। দুই গোষ্ঠীরই অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কয়েক বছর মামলা চলার পর শর্তসাপেক্ষে জামিন হয় অভিযুক্তদের। ১০ জন সাক্ষীর মধ্যে কেউই বলেননি যে তাঁরা নিজের চোখে দেখেছেন কে বা কারা খুন করেছে। আসানসোল আদালতে নিহতর বাবা তথা ইমাম সাহেব এর সাক্ষ্যদানের পর অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক শরণ্যা সেন প্রসাদ।অভিযুক্তদের আইনজীবী শেখর কুণ্ডুর জানান -, ‘ এই মামলায় অন্যতম সাক্ষী নিহতের বাবা ইমদাদউল্লা রশিদি এজলাসে তাঁর সাক্ষে জানিয়েছেন , তিনি যেহেতু নিজের চোখে কাউকে খুন করতে দেখেননি তাই তিনি সাক্ষ্য কী করে দেবেন। তিনি ছাড়া যাঁরা সাক্ষী হিসেবে ছিলেন, তাঁরাও জানিয়ে দেন এঁদের কাউকে খুন করতে দেখেননি।’গত শুক্রবার আসানসোল আদালতের এই রায়ের পর পুত্রহারা ইমামের সাহেব জানান , ‘আমি সেদিনও যে কথা বলেছি আজও সেটাই বলছি। উপরওয়ালা প্রকৃত বিচার করবেন। পুলিশ মামলা সাজিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের দায়িত্ব তারা প্রকৃত খুনি ধরবে। আমি যে হেতু নিজের চোখে কাউকে আমার ছেলেকে অপহরণ করতে বা খুন করতে দেখেনি, স্বাভাবিক ভাবেই আদালতে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে পারব না বলেই সাক্ষী দিইনি। চিরকাল আমি সত্যের জন্য লড়াই করে এসেছি। একজন ইমাম হিসেবে সত্যকে নিয়েই বাঁচতে চাই’। শান্তি ও সৌভৃত্ব অটুট রাখতে এবং সত্য কে নিয়ে চলা এইরকম ইমাম সাহেবদের খুবই দরকার সমাজের কাছে বলে অনেকেই মনে করছেন।