শূন্যতার কী কোনও পরিমাপ হয় ? যখন চারপাশটা ভরাট থাকে তখন শূন্যতার পরিমাপটাও অনুভূত হয় না। কিন্তু যখন শূন্যতা গ্রাস করে তখন তা এক অসীম শূন্যতার দিকে আমাদের টেনে নিয়ে যায়। গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের এই চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে, অন্তত আমি সেই অসীম শূন্যতার টানই অনুভব করছি। গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের এই চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে জেলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো। যা পূরণ হবার নয়। এটি একটি প্রথাগত শব্দ নয়। কেননা, গোপাল চট্টোপাধ্যায় যে সময় সাংবাদিকতা শুরু করে, সেই সময়কাল থেকে পরতে পরতে তার বিস্তৃতি ঘটার মধ্যে যে সময়কাল ধরা থাকে, সেই শূন্যতাই পূরণ হয় না। মফস্বল পশ্চিমবঙ্গের প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র সিউড়ীর প্রয়াত রমানাথ সিংহ সম্পাদিত দৈনিক চন্দ্রভাগা, স্বাধীনতা সংগ্রামী বিমল বিষ্ণু সম্পাদিত সাপ্তাহিক ময়ূরাক্ষী, কোটাসুরের সন্তু সেনগুপ্ত সম্পাদিত সাপ্তাহিক দিদিভাই – সহ জেলার অন্যান্য সংবাদপত্রের একটা সময়কালের অবদানের সঙ্গে যারা যুক্ত হতে পারেন নি, তারা পরবর্তীতে যতো “প্রভাশালী” সাংবাদিকই হোন না কেন, তাদের সমৃদ্ধ হওয়ার জায়গায় একটা শূন্যতা, গভীর শূন্যতা রয়েছে বলেই বিশ্বাস করি। অত্যুক্তি হবে না, এটা বলতে যে, স্টার আনন্দ যখন তার পথ চলা শুরু করে তখন জেলায় টিভি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে দূরদর্শনে “খাস খবর”-এর জেলা প্রতিনিধি সাঁইথিয়ার কিশোর দাস প্রথম টিভি সাংবাদিকতায় একটা সময় রচনা করে। পরে গোপাল চট্টোপাধ্যায়। এবং স্টার আনন্দের এবিপি আনন্দ হওয়ার মধ্যে যে সব বিষয়গুলি রয়েছে তা এ ক্ষেত্রে অনুচ্চারিত থাকাটাই ভালো। সেইসব সময় কাল থেকে অনেক সময়ই গোপাল চট্টোপাধ্যায় আমাদের সাপ্তাহিক বীরভূমের কথা পত্রিকা দপ্তরে এসেছে। সিউড়ী বড় ডাকঘরের সামনে দিয়ে গেলেই গোপাল তাঁর বইয়ের দোকান থেকে বেরিয়ে এসে টেনে নিয়ে গিয়ে বসাতো তাঁর দোকানে। তখন কাজের ব্যস্ততা ভুলে চলতো তুমুল আড্ডা। এক সময় আমি, সন্তু সেনগুপ্ত, সমর্পণ সেনগুপ্ত বা অরুণ মুখোপাধ্যায় রামপুরহাট গেলে সাপ্তাহিক বীরভূম অগ্নিশিখা’র কাঞ্চন চট্টোপাধ্যায় আশিসদার ( বর্তমানে রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়) -এর বাড়ি গিয়ে কুমড়ো, আলুর তরকারি দিয়ে মুড়ি খাবো না, এটা হতোই না। গোপাল চট্টোপাধ্যায় যখন এইসব বৃত্তগুলিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে তখন, আমরা অনেকটা পিছনে চলে এলেও এটা ভেবে ভালো লাগতো যে, আমাদের শূন্যতার পরিধিটা কেউ না কেউ ভরাট করছে। কিন্তু সেই গোপাল চট্টোপাধ্যায়-ই আজ চলে গেল এক অসীম শূন্যতা রচনা করে। তাঁর কর্মক্ষেত্রের স্থান পূর্ণ হবে, কিন্ত আমাদের বুকের মধ্যিখানের শূন্যতাটা কী পূর্ণ হবে ? – খায়রুল আনাম, বোলপুর। ৯৪৩৪২৪৯৬৭১