পূর্ব বর্ধমান – বীরভূম জুড়ে চলছে অজয় নদের বালিলুট
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু , মঙ্গলকোট,
নদ-নদীর বালি লুট আটকাতে রাজ্য সরকার সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একাংশের অশুভ আঁতাতে চলছে অবাধে বালিলুট।নদীর ভাঙন, বন্যার প্রকোপ থেকে যেমন রক্ষা মিলছেনা উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের।ঠিক তেমনি বেহাল সড়ক, বিপদজনক সেতুর মুখোমুখি সাধারণ মানুষের জীবন-মরণ। কি বা আসে যায়! রাজনৈতিক নেতাদের আর্থিকভাবে ফুলেফেঁপে উঠা কিংবা পুলিশ – ভূমি আধিকারিকদের কালো টাকার পাহাড় গড়া যেন সহজ ব্যাপার। অজয় নদ বয়ে গেছে পূর্ব বর্ধমান এবং বীরভূম জেলা জুড়ে। অজয় নদের এপারে পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম যেমন পড়ছে।ঠিক তেমনি আবার অজয় নদের ওপারে বীরভূমের ইলামবাজার, বোলপুর, নানুর এলাকা পড়ছে। প্রায় একশো কিমি গতিপথে অজয় নদের শতাধিক বৈধ ও অবৈধ বালিঘাট চলছে রমরমিয়ে।তাও জেসিবি মেশিন লাগিয়ে দিনরাত চলছে বালিলুট। সম্প্রতি মঙ্গলকোটের এক বৈধ ইজারাদারের অভিযোগে স্থানীয় থানার পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে এক জেসিবি মেশিন সহ দুটি ট্রাক্টর আটক সহ দুজন চালক কে গ্রেপ্তার করে থাকে। তবে তা হাতেগোনা কয়েকটি পদক্ষেপ। এইরকম বালিলুটেরাদের কারবার পূর্ব বর্ধমান জেলা ও বীরভূম জেলার প্রায় বালিঘাটে সক্রিয় বলে জানা গেছে।আউশগ্রামের এক নেতার মদতে বালিলুটে বিশেষ নজির রয়েছে। কোথাও আবার নদীর স্বাভাবিক গতিপথ আটকে বালিলুট চলছে।কেতুগ্রামের চরকির ব্রিজ সংলগ্ন বালিলুট দেখার মত।মহকুমা পুলিশ ও প্রশাসনের নাগের ডগায় এইরকম চলছে বলে অভিযোগ। একবার তো এক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালাতে গিয়ে শারীরিক হেনস্তার মুখে পড়েছিলেন। সেসময় স্থানীয় থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন জেলার প্রশাসনিক কর্তারা।অজয় নদের স্বাভাবিক গতি আটকে বড় বড় জলনিকাশি পাইপ ফেলে বালি বোঝাই গাড়ি চলাচলের রাস্তা তৈরির অভিযোগ উঠেছে কেতুগ্রামের রসুই গ্রামের কাছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি , ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত অজয় নদের বালি তুলে ওই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নদের ওপারেই রয়েছে কাটোয়া থানার চুরপুনি মৌজার রাজুয়া গ্রাম।পথের দুরত্ব কমাতেই নদীর উপরে এই অস্থায়ী রাস্তা করা হয়েছে বলেও দাবি এলাকাবাসীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীদের অভিযোগ, নদের জল কমে গেলে গবাদি পশুরা ওই পাইপের ভিতরে ঢুকে মারা পর্যন্ত যায়। নদীর মাছ না আসায় স্থানীয় জেলেরাও সমস্যায় পড়ে । মহকুমা প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে, সমস্যা আরও বাড়বে বলে জানা গেছে। মহকুমা প্রশাসন সুত্রে প্রকাশ , ‘নদীর স্বাভাবিক গতি আটকানো ঠিক নয়। সেচ দফতর ও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমায় অজয় থেকে বালি তোলার জন্য বেশকিছু বৈধ বালিঘাট রয়েছে। কেতুগ্রামের রসুইয়ের ঘাটটিও বৈধ। তবে রাস্তা তৈরির অনুমতি নেই বলেই দাবি করেছেন স্থানীয়রা। রাজোয়া গ্রামের।এক বাসিন্দা বলেন , ‘এ ভাবে বড় বড় পাইপ ফেলে রাস্তা করে ভারী বালির গাড়ি নিয়ে যাওয়ার ফলে পাড়ের কাছে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়ে যায়। পরে, নদীর জল বাড়লে ওই পাইপগুলি সরে গেলেও গর্তটা রয়ে যায়,চোরাবালি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল রয়েছে । নদীর দু’প্রান্তে একই অবস্থা হয়। সেই সময়ে নদীতে কেউ স্নান করতে গেলে কোথাও হাঁটু বা কোমর সমান জল থাকলেও পাইপের জায়গায় গভীর গর্ত থাকে। বছর দু’য়েক আগে রসুই গ্রামে এক যুবক ওই ভাবে জলে পড়ে মারাও গিয়েছে বলে প্রকাশ । মহকুমা প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত।’ অভিযোগ, বালিঘাটের ইজারাদারেরা প্রতি বছরই এভাবে রাস্তা তৈরি করেন। লিজ নেওয়া সীমানা ছাড়িয়েও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বালি তোলা হয় এখানে। এতে যেমন রাজ্য সরকারের রাজস্বে ক্ষতি হয়। তেমনই ক্ষতি হয় নদীরও।নদীর ভাঙন থেকে বন্যার প্রকোপ ক্রমশ বাড়ে।সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অজয় নদের এপার ও ওপারের দুই এলাকা।সম্প্রতি অজয় নদের বালিলুটে একক নিয়ন্ত্রণ রাখতে গিয়ে মঙ্গলকোট এবং আউশগ্রামের শাসক দলের দুই অঞ্চল স্তরের নেতা খুন হয়েছেন।যার একটির তদন্তে সিআইডি এবং অপর খুনের তদন্তে সিট রয়েছে। অজয় নদের বৈধ ইজারাদারদের সাথে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা না থাকলে বালিমাফিয়াদের দৌরাত্ম্য যেমন বাড়বে।ঠিক তেমনি বাড়বে রাহাজানির ঘটনাও।