টেটে মামলাকারী পাঁচজন কে তিনদিনের মধ্যে ইন্টারভিউ নেওয়ার নির্দেশ
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
গত বুধবারই কলকাতা হাইকোর্টের কাছে পর্ষদ তাদের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ইন্টারভিউ তালিকায় গলদ ছিল বলে দায় নেই।বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে মামলাকারীদের ইন্টারভিউ তালিকায় নাম সংযোজনে ৩ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ নিরসনে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে আদালতের নির্দেশে। প্রাথমিক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ নতুন করে শুনতে পোর্টাল তৈরি করবে সংসদ। সেখানে অভিযোগ জানানোর ১৫ দিনের মধ্যে তার সমাধান করতে হবে। প্রাথমিকে ৭৩৮ জনের নিয়োগ বিতর্কে পর্ষদের হলফনামায় বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তবে যে ৫ জন মামলা করেছেন, তাঁদের নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই বলে জানিয়েছে আদালত ।তাঁদের আগামী ২৬ ডিসেম্বর ইন্টারভিউয়ে ডাকা হবে বলে জানিয়েছে পর্ষদ।গত ২০ ডিসেম্বর প্রাইমারি টেটে ৭৩৮ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব প্রাইমারি এডুকেশন। গত ২০১৪ সালের প্রাইমারি টেটে প্রশ্নপত্র ভুল সংক্রান্ত যে মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশের নিরিখে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যম এর কাছে , ‘৭৩৮ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হল, তাঁরা এক সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ পাবেন’।এদিকে এই তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে গত ২২ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়। ৫ জন এই মামলাটি দাখিল করেন। তালিকা ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিযোগ ওঠে। গত বুধবার এই মামলার শুনানিতে পর্ষদ স্বীকারও করে নেয় ত্রুটির বিষয়টি। সেদিনই আদালত বলেছিল, ‘যোগ্য অথচ তালিকায় নাম নেই যাঁদের, তাঁদের নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কী ভাবছে তা বৃহস্পতিবার জানাতে হবে। পর্ষদের ওয়েবসাইটেও বিষয়টি আপডেট করে দিতে হবে’। এদিন এই মামলার শুনানি ছিল। পর্ষদ জানিয়ে দেয় যে ৫ জন মামলা করেছিলেন, তাঁরা চাকরি পাবেন। কারণ, তাঁরা যোগ্য প্রার্থী।গত ২০১৪ সালের টেটে ৬টি প্রশ্নে ভুল ছিল। তাই সেই প্রশ্নগুলির জবাব লিখলেই নম্বর দিতে হবে, আগেই বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০ ডিসেম্বর পর্ষদ স্ক্রুটিনি বা ইন্টারভিউয়ের জন্য ৭৩৮ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে থাকে ।পরদিন অর্থাৎ গত বুধবার মামলা হয় ফের আদালতে। মামলাকারীরা বলেন, তাঁরাও এই ৬ নম্বর পাওয়ার যোগ্য, তবে তাঁদের তা দেওয়া হয়নি।এরপরই চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ গত বুধবার আদালতে যান।এই মামলার শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার।গত বুধবারই মামলাকারীর আইনজীবী বলেছেন, -‘ অফলাইনে ফর্ম ফিলআপ করেছিলেন, তাঁদের অনেকে এখনও ভুল প্রশ্নের জন্য যে প্রাপ্য নম্বর তা পাননি। তাই ইন্টারভিউয়ের যে প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে তাঁদের নাম নেই’। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী জানিয়েছেন , -‘ অফলাইনে বড় সংখ্যক চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন। ফলে সেখানে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি থেকে গিয়েছে। পর্ষদ যোগ্যদের বঞ্চিত করবে না’, এই আশ্বাস দেয়। এরপরই বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, -‘এখন হাতেগোনা কয়েকজন মামলা করেছেন। এর পর আরও মামলা দায়ের হলে কী হবে?’ বৃহস্পতিবার পর্ষদ জানায়, ‘আর মামলার দরকার নেই’। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ নিজেদের পোর্টাল খুলছে খুব শিগগিরি। যার যা অভিযোগ আছে সেখানেই নথিবদ্ধ করতে পারবেন প্রার্থীরা। ১৫ দিনের মধ্যে যা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত পর্ষদ গ্রহণ করবে।প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ভুলের কারণে যে সমস্ত চাকরিপ্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, এবং পরবর্তীতে হাইকোর্টের নির্দেশে তাদের টেট উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়, সেই উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সমস্ত নথি যাচাইয়ের জন্য সময় দেওয়া হয়। যদি অনলাইনে অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রে ওই মামলাকারী চাকরিপ্রার্থীরা সরাসরি নথি জমা করতে পারবেন বলেও জানানো হয়।বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের তরফে মামলাকারী ৫ জন কে ৩ দিনের মধ্যে ইন্টারভিউ তালিকায় নাম সংযোজন করবার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ নিরসনের জন্য ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে আদালতের নির্দেশে।