Spread the love

ল (দ্বিতীয় পর্ব)

দেবস্মিতা রায় দাস

 "হোয়াটস আপ রঞ্জনা, কি করছো তুমি.. বলো তো? এতোবার ধরে শট নিচ্ছি, একটা শটও পারফেক্ট দিতে পারলেনা! এমন করলে চলে? কি হয়েছে আজ তোমার??"

একটা বড়ো দীর্ঘশ্বাস ফেলল রঞ্জনা। ফর্সা মুখ রাগের চোটে লাল হয়ে উঠল। নিজের উপরেই রাগ ধরছে তার। সত্যিই যে সে তার সবটুকু দিতে পারছেনা, সেটা সে নিজেও বুঝতে পারছে.. কিন্তু কারণটা ভাবলেই তার গা জ্বলে যাচ্ছে!

এই নিয়ে রোহনের সাথে তার চারবার ব্রেক আপ হল মাত্র তিন মাসে। দুজনে একসাথেও থাকতে পারেনা, আবার বেশী দিন দুজন দুজনকে না দেখেও থাকতে পারেনা। ছোট ছোট বিষয়ে বাচ্চাদের মতোন ঝগড়া হয়ে যায়।

রঞ্জনার মতোন রোহনও ফ্যাশন দুনিয়াতেই স্ট্রাগল করছে.. যদিও রঞ্জনাকে এখন আর ঠিক স্ট্রাগলার বলা যায় না।

গতকাল রাতেই যেমন রঞ্জনা একটা মুভি দেখবে, আর রোহন খেলা দেখবে.. সেই নিয়ে ঝামেলা। রঞ্জনার বিশাল থ্রি বেডরুম ফ্ল্যাটে দুটো হোম থিয়েটার আছে, থাকলে কি হবে.. দুজনে একসাথে কোনটা দেখবে সেই নিয়েই ঝগড়া। শেষমেশ অনেক্ক্ষণ রঞ্জনা না খেয়ে শুয়ে থাকার পরও যখন রোহন ডাকতে এলোনা, তখন বেরিয়ে এসে দেখে রোহন অন্য ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে। ব্যস, আর পায় কে.. সকালে উঠেই বলে দিয়েছে সে যেন অন্যত্র নিজের ব্যবস্থা করে নেয়! পুরো ঘটনাটা আবার মনে পড়তেই বিরক্তিতে তার ভুরু কুঁচকে গেল! আর আশ্চর্যের ব্যাপার অন্যান্য বারের মতোন এবার আর রোহনেরও কোনো ফোন বা মেসেজ আসেনি। আসেনি তো আসেনি, তারও বয়েই গেল!

রঞ্জনাঃ এবারে তাহলে রঞ্জনার পরিচয়ে আসা যাক। দক্ষিণ কোলকাতার নামকরা আবাসনে তিন কামরার ফ্ল্যাটে রোহন অগ্রবাল, মানে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে লিভ ইন করে সে। বাবা মা দুজনেই ডক্টর, কানাডায় থাকেন। একমাত্র মেয়ে সে। ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড জেদি আর একরোখা। দারুণ সুন্দর আর এট্রাকটিভ দেখতে বছর তিরিশের রঞ্জনা ফ্যাশন আর মডেলিং দুনিয়ায় সারা ফেলে দিয়েছে। জ্বলন্ত বহ্নিশিখার মতোন তার রূপের আগুনে পুড়তে রাজি সবাই, কিন্তু রঞ্জনা বিশেষ একটা কাউকে পাত্তা দেয় না। রোহনের সাথে মাস তিনেক আগে একটা ফ্যাশন শোতেই আলাপ৷ রঞ্জনা সেই শোর শো স্টপার ছিল। রঞ্জনার রূপে মুগ্ধ রোহন যেন আর চোখ ফেরাতে পারছিল না, নিজেই এসে আলাপ করেছিল। রঞ্জনা এমনি বিশেষ একটা কাউকে পাত্তা দেয় না, কিন্তু রোহনের মায়াভরা চোখে কেমন করে নিজেকে হারালো। রোহনের বাবা নামকরা ব্যবসায়ী.. বেশ দাপুটে লোক। রঞ্জনার সাথে তার সম্পর্কটা রোহনের পরিবার একদম ভালো চোখে দেখে না৷

রঞ্জনা খুব স্বাধীনচেতা মেয়ে, ছোটবেলার বান্ধবীরা তার প্রাণ.. এর বাইরে পিয়ানো বাজাতে আর শপিং করতে খুব ভালোবাসে। তবে সবকিছুর পরেও মাসের ওই একটি দিনের জন্য সেও কিন্তু অপেক্ষা করে।।

শুটটা বারবার মনের মতোন না হওয়ার আজকের মতোন ইতি করে দিয়ে বিরক্ত মুখে বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরায় রঞ্জনা। এরকম কোনোদিনও হয়না তার।

হঠাৎ সামনে তাকিয়েই তার সমস্ত মনখারাপের মেঘে যেন রোদের ছটা দেখা দিল। তার সামনে বৃষ্টি চ্যাটার্জি দাঁড়িয়ে, তাদের পঞ্চরত্নের একজন। এক মাস আগে দেখা হয়েছিল শেষবার তাদের এই গ্রুপ মিটেই। আগে তো দুই বান্ধবী একে অপরকে পেয়ে বিহ্বল! তারপর তার এখানে আসার আসল কারণটা বলল বৃষ্টি। শুনে রঞ্জনা তো অবাক। এমন অদ্ভুত কথা সে জীবনে শোনেনি। বৃষ্টি এখানে বন্ধুর সাথে দেখা করতে নয়, তার ইনভেস্টিগেশনে এসেছে। এখানে আবার কি হল রে বাবা, অবাক হয়ে ভাবে রঞ্জনা।

বৃষ্টির পরিচয়ঃ বৃষ্টি চ্যাটার্জি দুঁদে উকিল রাজর্ষি চ্যাটার্জির মেয়ে। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে কাজ করে। আপাতত কোলকাতাতেই পোস্টেড। এক মেয়ে এক ছেলেকে অন্যভাবেই তৈরি করেছেন রাজর্ষি বাবু। দুজনকেই ছোটবেলা থেকে ক্যারাটে শিখিয়েছেন। বৃষ্টির দাদা বিশাল সিনিয়র ইন্সপেক্টর অল্প বয়সেই আর বৃষ্টিও অনেক অল্প সময়েই অফিসে অনেক নাম কিনেছে৷ কদিন আগেই একটা প্রোমোশন হল। খুব ডাকাবুকো আর সাহসী মেয়ে বৃষ্টির মনটাও ছিল একদম স্বচ্ছ। অন্যের সাহায্য করতে তার জুড়ি মেলা ভার। এখানে এই নামকরা মিডিয়া হাউসেই বা এর আশেপাশে একজন ক্রিমিনালের লুকিয়ে থাকার খবর আছে। সেই ইনভেস্টিগেশনেই সে এখানে এসেছে। এসেই বান্ধবীকে দেখে যারপরনাই খুশি হল, সাথে সাথেই রঞ্জনা তাকে মনে করিয়ে দিল পরেরদিন, অর্থাৎ মাসের সেই চতুর্থ শনিবার তাদের পঞ্চরত্নের দেখা করার কথা। এবারে শহরের একটি নামকরা শপিং মলেই দেখা করতে যাচ্ছে তারা। হ্যাঁ তাইতো, কাজের চাপে বৃষ্টি প্রায় ভুলতেই বসেছিল। ভিতরে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য বৃষ্টি উঠল, রঞ্জনাও বিদায় নিল.. ইনভেস্টিগেটিং অফিসার তার বান্ধবী.. এটা এক্ষুনি এখানে কারুর জানার দরকার নেই।। (ক্রমশ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *