আঁধারে শৈশব,
গৌতম পাল,
আজ পৃথিবীটা শিশুদের বাসযোগ্য মোটেও নয়,
আমরা পারিনি বাসযোগ্য করতে লোভ লালসায়,
সবুজ পৃথিবীটা মোরা ধ্বংস করেছি স্বার্থের নেশায়!
আমরা কেড়ে নিয়েছি শিশুদের সুন্দর শৈশব,
কেড়েছি ওদের স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার।
কোমল হাতে দিতে পারি নি ওদের প্রিয় বইপত্র,
মাথায় দিয়েছি তুলে পাথরের ভারি বোঝা, আর
বানিয়ে রেখেছি ওদের আজও বোবা, শিকলে
বেঁধে দিয়েছি ওদের জীবন বদ্ধ ঘরের এক কোণে।
আজ ওরা সোজা হয়ে দাঁড়াবার শক্তি হারিয়েছে,
শিরদাঁড়াটা গেছে বেঁকে, একেবারে গেছে বেঁকে!
বিপন্ন শৈশব, ভেঙে চুরমার শৈশবের যত স্বপ্ন!
আজ পৃথিবীতে শুধুই যুদ্ধ, হিংসা আর রক্তপাত,
বাতাসে ভরা বিষাক্ত ধোঁয়াশা, বারুদের গন্ধ পাই!
নিষ্পাপ শিশুরা মরছে গুলি খেয়ে কিংবা না খেয়ে,
ওদের বাঁচাটাই বড় দায়, স্বজন হারানোর যন্ত্রণায়!
ওরা বুঝতে পারে না ঠিক-বেঠিকের পার্থক্য,
বুঝতে দেইনি ভালো-মন্দ — বোঝানোর দায় কার?
শিশুরা আজ রয়েছে দোটানায়, বাঁচতে আগ্নেয়াস্ত্র
তুলে নিয়েছে কোমল হাতে, প্রাণ কাড়বে কিংবা
চিরতরে ঘুমিয়ে পড়বে বুলেটের এক নিশানায়!
এভাবেই কাটে বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থান হয়,
পেট ভরে আর গুলি ছোড়ে, ওদের রঙিন স্বপ্নগুলি
ওই দূর আকাশের গায় উড়ে বেড়ায়! আমরা পারিনি,
সত্যিই আমরা পারিনি পৃথিবীটাকে ওদের মতো
করে গড়তে, আজ কাঁদে শিশু, বিপন্ন শৈশব,
ওরা বিভ্রান্ত দিকভ্রষ্ট এই উন্মাদ উদ্ভট পৃথিবীতে!
আজও শিশু শ্রমিকের রমরমা বাজার, জুটছে
চাকরি, খাবার আর জুটছে অমানবিক অত্যাচার!
চায়ের দোকানে, রেস্টুরেন্টে কিংবা হোটেলে,
হাতে বই খাতার বদলে শোভা পায় এঁটো বাসনপত্র,
ধুয়ে চকচকে করে আর শৈশব ডোবে অন্ধকারে,
হারিয়ে যায় সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল এক শৈশব!
আজ শিশু দিবস, খুশি আনন্দ উল্লাসের সময়,
কিন্তু হায়! আমরা তুলে দিতে ব্যর্থ সোনালী দিন।
আমাদের ক্ষমা নেই, আমরা অপরাধী, শাস্তি দাও
কঠিনতর, আজ নিজ হাতে সুন্দর পৃথিবীটা গড়।