এবারের পুজোর মন্ডপেও ‘নো এন্ট্রি’ হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
‘আইন দিয়ে কোন কিছু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়না।তারজন্য দরকার জনসচেতনতা’। দুর্গাপূজোর গাইডলাইন চেয়ে মামলায় এই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট গতবারের হাইকোর্টের জারি করা গাইডলাইন পুনরায় অব্যাহত রাখলো।এতে আপত্তি জানাইনি রাজ্য।যদিও রাজ্যের তরফে আগামী ১০ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত রাতের দিকে করোনা স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে মন্ডপে ‘নো এন্ট্রি’ এবারেও বহাল রাখলো কলকাতা হাইকোর্ট। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের এজলাসে দাখিল হয়েছিল আসন্ন দুর্গাপূজায় গাইডলাইন চেয়ে মামলা। মারণ ভাইরাস করোনার তৃতীয় ঢেউ আসন্ন। অক্টোবরের মধ্যেই তা দেশজুড়ে প্রকোপ ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছে আইসিএমআর থেকে শুরু করে রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তারাও। উত্তরবঙ্গে শিশুদের জ্বরের নেপথ্যে অনেকেই মনে করছেন, তৃতীয় ঢেউয়ের দাপটেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতির কথা তুলে এ বছরের দুর্গাপুজো এবং অন্যান্য উত্সবের সময় গাইডলাইন চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। আবেদন ছিল, আগের বছরের মতো এবারও দুর্গোত্সব পালনে নির্দিষ্ট নিয়মবিধি লাগু করুক উচ্চ আদালত। গত বছর করোনা স্বাস্থ্যবিধি কড়াভাবে বজায় রাখতে আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে ঐতিহাসিক রায় শুনিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। পুজোর মন্ডপের ভেতরে দর্শনার্থীদের কে ‘নো এন্ট্রি’ দেখিয়ে ছিল হাইকোর্ট। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত পুজোর কেনাকাটার জন্য দোকান কিংবা শপিং মলে ‘জনস্রোত’ দেখে বিচলিত হয়েছিল হাইকোর্ট। তাই এইরুপ ভীড়ের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার জন্য একগুচ্ছ নির্দেশিকা দিয়ে রায় শোনায় সেসময় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। এই রায় কার্যকর করার জন্য পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসন এবং পুজো উদ্যোক্তাদের এখন থেকেই জনস্বার্থ প্রচার করতে বলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের তরফে।গত বছর সারারাজ্যে ৫০ হাজারের কাছাকাছি দুর্গাপূজা হয়েছিল। এদের মধ্যে এবারে ৩৪ হাজার পুজো সরকারি অনুদান প্রাপ্ত ছিল। কলকাতা মহানগরে হয় ৩ হাজারের বেশি পুজো। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে দুর্গাপূজা বন্ধে জনস্বার্থ মামলায় রায়দান ঘটেছিল গতবছর । সেখানে প্রতিটি পুজোর মন্ডপে দর্শনার্থীদের ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছিল। প্রতিটি পুজো মন্ডপ কে কনটেনমেন্ট জোন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে জনগন কে দুর্গাপূজার ভার্চুয়াল কভারেজ দেখবার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ভিড় নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কে দোষ দেওয়া যায়না। যেখানে কলকাতা মহানগরে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ লাখ দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে, সেখানে মাত্র ৩২ হাজার কলকাতা পুলিশ কি করবে? তাই পুজো নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়দানের বিষয়বস্তু বিশেষত করোনা স্বাস্থ্যবিধি কঠোর ভাবে পালনে প্রচার কর্মসূচি গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। পুজো মন্ডপের ভেতর ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি জমায়েত করা যাবেনা। এই ব্যক্তিদের তালিকা আগেভাগেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কে জমা দিতে হবে। জমাকৃত তালিকার বাইরে কোন ব্যক্তি প্রবেশ করতে পারবেনা মন্ডপের ভেতরে। ছোট কিংবা বড় প্যান্ডেলে বহিরাগত দর্শনার্থীরা ঢুকতে পারবেনা । প্যান্ডেলের সামনে এবং লাগোয়া এলাকায় ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড ঝুলিয়ে রাখতে হবে । প্রতিটি পুজোর মন্ডপ কনটেনমেন্ট জোন হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। ছোট পুজোয় ৫ মিটার এবং বড় পুজোয় ১০ মিটারের সামনে ব্যারেকেড থাকবে। এবারেও তা বহাল রাখলো কলকাতা হাইকোর্ট। এতে অবশ্য আপত্তি জানাইনি রাজ্যও।